কোটি ভক্তের আর্জেন্টিনার দলটি কেমন হলো?

বিশ্বকাপের দল ঘোষণার রীতিমতো ধুম চলছে। আগামী ৪ জুন চূড়ান্ত দল ঘোষণার শেষ সময়। কিন্তু ততোদিন যেন অপেক্ষাই করতে চাইছে না দলগুলো। অনেক আগ থেকেই রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা করা শুরু হয়েছে। কাল চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে দিলেন আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলিও। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কেমন হলো গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ এবং গত দুই কোপা আমেরিকার রানর্সআপ আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দল।

সম্প্রতি কয়েক বছরের মতো আর্জেন্টিনার রাশিয়া বিশ্বকাপের দলও আক্রমণভাগ নির্ভর। আক্রমণভাগে বড়বড় তারকায় ভরা, কিন্তু অন্য জায়গাগুলোতে শূণ্যতা। ব্যালেন্স টিম বলতে যা বোঝায় সম্প্রতি বছরগুলোতে তা পায়নি দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। রাশিয়া বিশ্বকাপেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

আক্রমণভাগে তারকায় ঠাসা কিন্তু গোলবারের নিচে, ডিফেন্সে এবং মাঝমাঠে পর্যাপ্ত বড় তারকা নেই। আর্জেন্টিনা দলে গোলরক্ষক তিনজন। সার্জিও রোমেরো, ফ্রাঙ্কো আরমানি ও উইলি কাবায়েরো। এদের মধ্যে অভিজ্ঞ সার্জিও রোমেরোর ওপরই হয়তো বেশি ভরসা করবেন সাম্পাওলি। কিন্তু চলতি মৌসুমটা মোটেও সুবিধার কাটেনি রোমেরোর। পুরো মৌসুমে লিগে রোমেরোকে মাত্র একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সব মিলিয়ে মৌসুমে মাত্র ১০টা ম্যাচে মাঠে নামতে পেরেছেন। বুঝাই যাচ্ছে রোমারোর ওপর ভরসা করতে পারেনি ম্যানইউ। কিন্তু আর্জেন্টাইনদের তার ওপরই ভরসা করতে হবে।

ডিফেন্সে হ্যাভিয়ের মাসচেরানো, মার্কাস রোহোর মতো তারকাদের রাখা হয়েছে। তবে মাসচেরানো, রোহোদের গায়ে ‘তারকা’ তমকা সেটে থাকলেও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই তারা। ৩৩ বছর বয়সী মাসচেরানো কয়েক মাস আগে বার্সেলোনার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে যোগ দিয়েছেন চীনা ফুটবলে। মার্কাস রোহো চলতি মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ঠিকভাবে সুযোগই পাননি। লিগে মাত্র ৯ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন রোহো। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে তাকে মাত্র ১২ ম্যাচ খেলিয়েছে ম্যানইউ।

রক্ষণভাগে নিকোলাস ওটামেন্ডি ও ফেডেরিকো ফ্যাজিওদের প্রতিই বেশি প্রত্যাশা থাকবে আর্জেন্টিনার। ওটামেন্ডি ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে চলতি মৌসুমে বেশ ভালোই খেলেছেন। আবার ফেডেরিকো ফ্যাজিও রোমার হয়ে বেশ ভালো ফুটবলই খেলেছেন। তবে সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগকে শক্ত বলার সুযোগ নেই।

মিডফিল্ডে এভার বানেগা, ম্যানুয়েল লানজিনি, ম্যানুয়েল লানজিনিরা আছেন আর্জেন্টিনার মাঝমাঠে। তবে তাদের ধারাবাহিক ভালো খেলার নজির খুব কম। ফলে রক্ষণভাগের মতো আর্জেন্টিনার মাঝমাঠও প্রত্যাশামতো নয়।

কিন্তু আক্রমণভাগটা অবশ্যই বিশ্বের অন্যতম সেরা। আর্জেন্টাইনদের প্রত্যাশাও এই আক্রমণভাগের ওপর। লিওনেল মেসির মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে। তার সাথে আছেন তরুণ পাওলো দিবালা এবং অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, গঞ্জালো হিগুয়েইন ও সার্জিও আগুয়েরো।

যদিও মেসি-ডি মারিয়া ছাড়া বাকি তিনজন ছন্দে নেই। দিবালা ও হিগুয়েইন চলতি মৌসুমে ধারাবাহিকভাবে গোল পায়নি। নেইমার যাওয়ার পর ডি মারিয়াও ঠিকভাবে সুযোগ পাননি পিএসজির হয়। অবশ্য সার্জিও আগুয়েরো নিয়মিত গোল পেয়েছেন। কিন্তু মাস দুই যাবত ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে ম্যানচেস্টার সিটি তারকা। আগুয়েরো অর্ধেত ফিট হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন এমন কথাও উঠছে। এমন অবস্থায় দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাওরো ইকার্দিকে দলে না রাখাতে হোর্হে সাম্পাওলির বেশ সমালোচনা হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে ইন্টার মিলানের হয়ে ৩৪ ম্যাচে ২৯ গোল করেছেন ইকার্দি। তবে ইকার্দি না থাকলেও আক্রমণভাগই বড় ভরসা আর্জেন্টিনা সমর্থকদের। দেখা যাক, প্রত্যাশা কতোটা মেটাতে পারে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ।

আর্জেন্টিনার চূড়ান্ত দল:

গোলরক্ষক: সার্জিও রোমেরো, ফ্রাঙ্কো আরমানি, উইলি কাবায়েরো

ডিফেন্ডার: ক্রিস্টিয়ান আনসালদি, মার্কোস রোহো, মার্কোস আকুনা, নিকোলাস ত্যাগলিয়াফিকো, গ্যাব্রিয়েল মারকাদো, নিকোলাস ওটামেন্ডি, হাভিয়ের মাচেরানো, ফেডেরিকো ফ্যাজিও।

মিডফিল্ডার: এভার বানেগা, লুকাস বিলিয়া, এডুয়ার্ডো সালভিও, ক্রিস্টিয়ান প্যাভন, ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেজা, ম্যানুয়েল লানজিনি, জিওভানি লো সেলসো।

ফরোয়ার্ড: লিওনেল মেসি, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, পাওলো দিবালা, সার্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়েইন।