বার্সার গায়ে পাঁচ ‘কলঙ্ক’

ট্রান্সফার উইন্ডোর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিতর্কের এক নাম হয়ে উঠেছে বার্সেলোনা। পছন্দের ফুটবলারদের দলে ভেড়াতে গিয়েই এসব বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কাতালান ক্লাবটি। যার সবশেষ সংযোজন ম্যালকম। শুধু ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডারই নয়, গেল কয়েক বছরে এমন আরো কয়েকজন ফুটবলার কিনেছে বার্সা, যা তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য তেমনই বার্সার কয়েকটা চুক্তি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:

ম্যালকম অলিভেইরা: প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে ফ্রেঞ্চ ক্লাব বোর্দে থেকে ম্যালকমকে উড়িয়ে এনেছে বার্সেলোনা। এ জন্য কাতালান ক্লাবটিকে খরচ করতে হয়েছে ৪১ মিলিয়ন ইউরো। অথচ ম্যালকমের চুক্তি করার কথা ছিল এএস রোমার সঙ্গে। চুক্তির ব্যাপারে ইতালিয়ান ক্লাবটির সঙ্গে পাকা কথাও হয়েছিল তার।

কিন্তু বার্সেলোনার প্ররোচণায় হঠাৎ করেই ইউটার্ন নেন ম্যালক্যাম; রোমার বদলে যোগ দেন বার্সায়। পরে ক্ষুব্ধ রোমা অভিযোগ করে- ম্যালকমকে ‘ছিনতাই’ করেছে বার্সা। কাজটা যে ঠিক হয়নি সেটা কাতালান ক্লাবটিও বুঝতে পেরেছে। তাই রোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে তারা। যদিও তাদের ক্ষমা করেনি রোমা। উল্টো রোমা জানিয়ে দিয়েছে লিওনেল মেসিকে বিক্রি করলে তবেই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে তারা।

ফিলিপ্পে কুতিনহো: নেইমারকে হারানোর পরই তার শূন্যস্থান পূরণে মরিয়া হয়ে উঠেছিল বার্সেলোনা। এই প্রক্রিয়ায় তাদের পছন্দের একজন ছিল ব্রাজিলিয়ান আরেক ফুটবলার ফিলিপ্পে কুতিনহো। এই মিডফিল্ডারও বার্সায় আসতে রাজিও ছিল। কিন্তু বেঁকে বসে লিভারপুল। কুতিনহোর জন্য বার্সা একের পর এক প্রস্তাব দিলেও টলাতে পারেনি অল রেডদের। ক্ষোভে-হতাশায় লিভারপুলের দুটি অনুশীলনেও যোগ দেননি ব্রাজিলিয়ান তারকা।

ইংলিশ ক্লাবটিও রাগে ফেটে পড়েছিল। বার্সাকে সাফ জানিয়ে দেয় ‘কুতিনহো নট ফর সেল’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মধ্যমাঠের সারথিকে আর আটকে রাখতে পারেনি লিভারপুল। গত বছর গ্রীষ্মকালীন দল-বদলের শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে বার্সা চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলে কুতিনহোর সঙ্গে। তবে চুক্তিটা বিলম্ব করায় আর্থিক দিক থেকে অনেক লাভবান হয়েছিল লিভারপুল। ১০৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বদলে কুতিনহোকে বার্সার কিনতে হয় ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে। যা এই মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ কোনো চুক্তি।

আর্দা তুরান: অনেকটা নাটকীয়ভাবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে আর্দা তুরানকে নিয়ে এসেছিল বার্সা। কিন্তু তুর্কি মিডফিল্ডারকে এনে লাভ হয়নি তাদের। বার্সা অধ্যায়ে ‘সুপারফ্লপ’ যান তুরান। পরে রিলিজ ক্লজের মাধ্যমে সেই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছেই তাকে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্টনরা। কিন্তু মাদ্রিদের ক্লাবটি আর তুরানকে গ্রহণ করেনি। তাই তুর্কি তারকাকে তার স্বদেশি ক্লাব ইস্তাম্বুলে ধারে খেলতে পাঠিয়ে দেয় বার্সা।

অবশ্য তুরানকে ঠিকঠাক ব্যবহারও করতে পারেনি বার্সা। ট্রান্সফার ইস্যুতে তুরানের ওপর নেমে আসে নিষেধাজ্ঞার খড়গ। তাই তুরানকে কেনার পরও ছয় মাস তাকে বেঞ্চ বসিয়ে রাখতে হয়েছিল বার্সাকে। যা এই মিডফিল্ডারের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় একটা ধাক্কা হয়ে এসেছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে বার্সা তুরানকে মাঠে নামালেও চেনা ছন্দে আর ফিরতে পারেননি তিনি।

উসমান ডেম্বেলে: নেইমার পিএসজিতে চলে যাওয়ার পর শুধু কুতিনহোই নয়, উসমান ডেম্বেলেকেও নিয়ে এসেছিল বার্সা। এ জন্য বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে তাদের দিতে হয়েছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু ডেম্বেলেকে বিক্রি করার জন্য রাজি ছিল না জার্মান ক্লাবটি। অথচ নেইমারের প্রথম বিকল্প হিসেবে ফ্রেঞ্চ ফরওয়ার্ডকেই পছন্দ ছিল বার্সার।
ডর্টমুন্ডকে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা।

ডেম্বেলে এই অংকেই বার্সায় আসতে রাজি ছিল। কিন্তু ডর্টমুন্ড হয়ে উঠল নাছোড়বান্দা। আসলে ডেম্বেলে বিক্রি করবেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ডর্টমুন্ডের ক্রীড়া পরিচালক মাইকেল জর্ক। প্রতিবাদে ডর্টমুন্ডের হয়ে অনুশীলন বন্ধ করে দেন ডেম্বেলে। বার্সায় খেলার জন্যই এমন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন ফরাসি তরুণ।

নেইমার দ্য জুনিয়র সান্তোস: বার্সেলোনার ইতিহাসে এ যাবতকালের সবচেয়ে বিতর্তিক ট্রান্সফারের নাম নেইমার দ্য জুনিয়র সান্তোস। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ের পর ২০১৩ সালে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারকে দলে টানে বার্সেলোনা। ৫৭ মিলিয়ন ইউরো বিনিময়ে সান্তোস থেকে নেইমারকে কিনে নেয় বার্সা। বিতর্কের শুরু হলো এরপরই।

দুই বছর আগে বোমাটা ফাটিয়েছে ‘ফুটবল লিকস’। তারা জানিয়েছে নেইমারকে দলে টানতে ১০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে বার্সেলোনার। কিন্তু কর ফাঁকি দেওয়ার কারণে চুক্তির বাকি অর্থটা লুকিয়ে রাখে কাতালান ক্লাবটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ফোরক খরবটা বেরোয়। এই দলবদলের জন্য নেইমারের বাবা-মাকে ৪০ মিলিয়ন ইউরো উপঢৌকন দেয় বার্সেলোনা!

এই ট্রান্সফার বিতর্কের দায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়াতে হয় ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি সান্দ্রো রোসেলকে। তার ঠিক একদিন পরই বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল। জানা যায় চুক্তির আসল অংকটা। আর্থিক এই দুর্নীতির দায়ে বার্সেলোনা, ক্লাবের বর্তমান সভাপতি হোসেপ মারিয়া বার্তেমেউকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল স্প্যানিশ কর বিভাগ!