আপনি পড়ছেন

মানুষ মারা যাওয়ার পর তাকে কবর দেয়া হয়, নয়ত পুড়ে ফেলা হয়। পোড়ানো দেহের হাড়গোড় একত্রিত করে দেয়া হয় মাটি চাপা। আর কবর দেয়ার পর শরীর থেকে মাংস পঁচে-গলে যাওয়ার পর অবশিষ্ট থাকে হাড়। বর্ণনা শুনে অনেকে হয়ত কিছুটা অস্বস্তিবোধ করছেন। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ যারা ওই পচে-গলে যাওয়া দেহের হাড়ের বা কঙ্কালের ব্যবসা করে।

Skeletons bussiness

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় চলে নরকঙ্কালের ব্যবসা। নরকঙ্কাল ব্যবসায়ী নামেই তারা পরিচিত। কবর থেকে কঙ্কাল তুলে বেঁচে দেওয়ার এই চক্রটির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন। রাতের অন্ধকারে বিশেষ করে মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের কবর খুড়ে কঙ্কালে চুন, অ্যাসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক দিয়ে পরিষ্কার করে চক্রটি কঙ্কাল উদ্ধার করে। পরে তা বিদেশে পাচার করে দেয়।

পাশাপাশি টাকার অভাবে অর্ধ দগ্ধ করা গরিব হিন্দুদের দেহ, পানিতে ভাসিয়ে দেয়া লাশ এবং হাসপাতাল থেকে চুরি করা বেওয়ারিশ লাশের থেকে কঙ্কাল বের করে তা বিক্রি করে দেয় তারা। বেওয়ারিশ লাশ হাসপাতাল থেকে পাচার হওয়ার পিছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও হাত থাকে বলে মনে করে পুলিশ।

কয়েক দিন আগে বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলিতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোট ১৮টি পূর্ণ নরকঙ্কাল উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে আটক করে চার নরকঙ্কাল ব্যবসায়ীকে। ২০০৯ সালে বিহারের ছাপরা জেলায় এক বাসযাত্রীর কাছ থেকে ৬৭টি করোটি (মাথার খুলি) উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনার মাসখানেকের মাথায় উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে উদ্ধার হয় ২৭টি বাচ্চার মাথার খুলি এবং শ'‌খানেক হাড়।

২০০৪ সালে ঘটেছিল সবচেয়ে বড় ঘটনা। সেবার বিহারে বোধগয়ায় নদীর তীরে বালি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছিল ১ হাজারটি মাথার খুলি!‌ আর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলা বরাবরই নরকঙ্কাল ব্যবসার একটি বড় ঘাঁটি। ২০০৬ সালে বর্ধমানের পূর্বস্থলী গ্রামেই একসঙ্গে ২০টি করোটি উদ্ধারের পর এলাকার কবরস্থানগুলির নিরাপত্তার দাবি তোলে স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় মাস্তানরা জড়িত এসব অবৈধ ব্যবসার সাথে। যাদের হাত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। ফলে প্রশাসন এদের ধরলেও পরে চাপের মুখে ছেড়ে দেয়।

রাজ্য পুলিশের কালনা সাব ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার প্রিয়ব্রত রায় একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নরকঙ্কাল ব্যবসায়ীদের ঘাটি থাকে বিভিন্ন শ্মশানের পাশে ও নদীর তীরে। অবৈধবাবে সংগ্রহ করা লাশ অ্যাসিড ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সাহায্যে তারা পরিষ্কার করে, পরিষ্কার করার পর কঙ্কালটাকে রোদে শুকানোর পর ব্লিচ করে প্রস্তুত করা হয় বিক্রির জন্য।

পুলিশের দাবি, কলকাতার মেডিকেল কলেজে অস্থিবিদ্যা পড়ানোর জন্য বিক্রি করা হয় এই নরকঙ্কাল। তবে বেশির ভাগ কঙ্কালই পাচার করা হয় বিদেশে। পশ্চিমবঙ্গ হতে চোরাপথে কঙ্কাল যায় লাগোয়া রাজ্য বিহার বা ঝাড়খণ্ড হয়ে নেপালে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, নেপাল এবং চীন, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি সুদূর ইউরোপ-আমেরিকার মেডিকেল স্কুলেও পৌঁছে যায় এই নরকঙ্কাল।

কলকাতার একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, আজকাল আসল নরকঙ্কাল সহজলভ্য নয় বলে মেডিকেল কলেজে পলিমারের তৈরি নকল নরকঙ্কাল ব্যবহার করা হয়। তবে আসল নরকঙ্কাল পেলে, মেডিকেল কলেজগুলো সেগুলোই নিতে চায়। ফলে চোরাই কারবারিরা মেডিকেল কলেজগুলোতে প্রকৃত কঙ্কাল সরবরাহের চেষ্টা করছে।

আসল নরকঙ্কালের আরও কিছু বেআইনি ব্যবহার চলে চীনে এবং জাপানে। সেখানে প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী নানা ধরনের ওষুধ, বিশেষত যৌনশক্তি বর্ধক ওষুধ বানাতে নরদেহের কিছু বিশেষ হাড় কাজে লাগানো হয়। বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মের গুরুরা তান্ত্রিক আরাধনার জন্য করোটি ও হাড় ব্যবহার করে। এছাড়াও নানা ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক ও আধিভৌতিক বিদ্যার চর্চার জন্যও নাকি মানবশরীরের হাড়ের প্রয়োজন হয়। আর এসব বাজার চাহিদা অনুযায়ী চলে নরকঙ্কালের যোগান।

ভারতে বেশ আগে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপের মুখে সরকার, ১৯৮৫ সালে আইন করে নরকঙ্কালের ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছে ৷ পুলিশ খবর পেলে অভিযান চালায়, গ্রেফতার করে। কঙ্কাল জব্দ করে। কিন্তু শাস্তি দেয় আদালত। এর বেশি পুলিশ করতে পারছে না। ফলে চক্রগুলো থামছে না। তারা গ্রেপ্তার থেকে মুক্তি পেয়ে ফের শুরু করে দেয় তাদের ব্যবসা।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.