ভারতের হাতছাড়া হয়ে যাবে কাশ্মির?

ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মির এলাকায় এসেছে আরেকটি গ্রীষ্ম। গত কয়েক বছরের মধ্যে শেষ গ্রীষ্মটি ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। গত জুলাই মাসে ভারতীয় বাহিনীর হাতে কাশ্মিরের 'স্বাধীনতাকামী' নেতা বুরহান ওয়ানি খুন হওয়ার পর চার মাসে সেখানে অন্তত ১০০ বেসামরিক মানুষের প্রাণ গিয়েছে। এই বছরের গ্রীষ্ম নিয়েও আতঙ্কে রয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতীয় বাহিনী ও ভারতীয় শাসন বিরোধী তরুণদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেকেই। এ ছাড়া খুবই বিরল একটি চিত্র সামনে আসে, আর তা হলো স্কুল ছাত্রীদের পুলিশের গাড়িকে উদ্দেশ্য করে পাথর ছোড়ার দৃশ্য।

মূখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি দলের সঙ্গে মিলে একটি জোট সরকার চালাচ্ছেন। গত সোমবার তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি সংলাপ ডেকে সব কিছু মিটমাটের অনুরোধ নিয়ে দিল্লি ছুটে যান। তবে জানা যায়, প্রচন্ড সহিংসতা ও জঙ্গি আক্রমণ চলাকালে উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী ও অবাধ্য গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কোন আলোচনায় সম্মতি দেবে না সরকার।

এরদিকে, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আঞ্চলিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লাহ ‘ভারত কাশ্মির হারাচ্ছে’ বলে সতর্ক করেছেন।

ফারুক আবদুল্লাহ পরামর্শ দিয়েছেন, 'ভারতের উচিৎ পাকিস্তান, বিচ্ছিন্নতাবাদী, মূলধারার রাজনৈতিক দল, কাশ্মিরের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়সহ সকল স্তরে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের সামরিক নয় বরং একটি রাজনৈতিক পথ বের করা।’

অন্যদিকে বিশ্লেষক শেখর গুপ্তর ভাষ্যমতে, 'কাশ্মীরে বর্তমানে ভারতের পাঁচ লক্ষ সৈন্য রয়েছে, ফলে এলাকা হাতছাড়া হওয়ার সুযোগ নেই। তবে, ভূখণ্ডটি নিরাপদ থাকলেও এটি ভারতীয়দের অনুভূতি ও মানসিকতার দিক থেকে হারাতে বসেছে।'

তিনি বলছেন, 'সম্প্রতি শ্রিনগরের নির্বাচনে মাত্র ৭ শতাংশ বোটারের উপস্থিতি এটাই নির্দেশ করে যে ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সেখানকার মানুষ হারাচ্ছে ভারত।'

কাশ্মিরের ভারত বিরোধী প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন একদল বেপরোয়া ও বিচ্ছিন্নবাদী তরুণ। দেখা যায়, উপত্যকার ৬০ শতাংশের বেশি পুরুষের বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। এদের বেশিরভাগই ক্ষুদ্ধ ও বিভ্রান্ত।

আয়জাজ নামের ১৯ বছরের এক তরুণ বলেন, 'আমলা হয়ে কাশ্মিরকে সেবা দেয়ার স্বপ্ন দেখতাম আমি। কিন্তু ভারতীয় নিপীড়নের মুখে আমার সব আশা শেষ হয়ে গেছে। আমি আর আমার বন্ধুর এখন আর মৃত্যুকে ভয় করি না।'

ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা জুনায়েদ আজিম মাত্তু এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, 'সেখানকার যুবকেরা নির্ভীক হয়ে ওঠেনি বরং বিচ্ছিন্ন বোধ করছে। তাদের মধ্যে অপমানবোধ কাজ করছে। তারা হয়ে উঠেছেন অপরিণামদর্শী।'