'বিরল ঐকমত্য' নিরাপত্তা পরিষদের, সহিংসতা বন্ধের আহ্বান

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান রোহিঙ্গা নির্যাতন, গণহত্যা, ধর্ষণসহ নানাধরণের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই প্রথমবারের মতো একমত হতে পারলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এই ঘটনাকে বিরল ঐক্যমত বলছে। এর আগে কখনোই রোহিঙ্গা ইস্যুতে ১৫টি রাষ্ট্র একমত হতে পারেনি।

মিয়ানমারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্ররাষ্ট্র চীন প্রথমে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার অধিকার বিষয়ক মিসরের এক প্রস্তাবে আপত্তি জানায়। এরপর নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর সুপারিশে শেষ পর্যন্ত ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র সর্বসম্মতভাবে দীর্ঘস্থায়ীভাবে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে একমত হয়। আজ বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের সামরিক অভিযানে 'মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ' করেছে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘ বিষয়ক পরিচালক অক্ষয় কুমার বলেন, ‘দিনটি আমাদের অনেক বড় কিছু অর্জনের দিন। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদ একমত হয়েছে। এটি সত্যিই একটি বিরল ঘটনা এবং বিশ্ববাসীর জন্য শুভবার্তা।

নিরাপত্তা পরিষদ রাখাইনে চলমান সহিংসতা এখনই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ত্রাণকর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এর আগে বিগত নয় বছরে কখনো কোন ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদ এমনভাবে একমত হতে পারেনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিষয়টি 'বিরল ঐকমত্য' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

জানা গেছে, নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্মম অত্যাচার, গণহত্যাসহ সর্বনাশা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এরপরই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের অভিযানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে বলে সর্বসম্মতভাবে অভিযোগ করে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্র। এই ধরণের মানবতাবিরোধী সহিংসতা বন্ধ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারকে সর্বসম্মত আহ্বান জানানো হয়।

সহিংসতা বন্ধ, সেই সঙ্গে রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, নাগরিকদের সুরক্ষা, অধিকার, সামজিক ও আর্থিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং শরণার্থী সংকট নিরসনের আহ্বান জানায় নিরাপত্তা পরিষদ। নিরাপত্তা পরিষদ তাদের এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা দেয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায়। পাশাপাশি জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়। মিয়ানমারে রাখাইন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য কফি আনান কমিশন বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

জাতিসংঘে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ম্যাথুই রাইক্রফট বলেন, 'নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রেসিডেন্সিয়াল বিবৃতির আহ্বান জানিয়েছে। যেটা অফিসিয়াল রেকর্ড হিসেবে রাখা হবে। দীর্ঘ নয় বছর পর বিশ্বের কোন ঘটনায় একমত হলো নিরাপত্তা পরিষদ। আমরা রাখাইনের মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে একমত।’