পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে হুমকি, আমাদের ‌‌‘ললিপপ’ দেবেন না

সৌদি আরবে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগীর খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন দেশটির সিনেট চেয়ারম্যান রাজা রব্বানি। সোমবার সিনেট অধিবেশনে মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শাহীদ খাকান আব্বাসির বিরুদ্ধেও সংসদ অবমাননার অভিযোগ তোলার বিষয়ে সতর্ক বার্তা দেন তিনি।

সৌদিতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বক্তব্য জানাতে তলব করা হলে সিনেট অধিবেশনে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী দস্তগীর খান বলেন, ‘দেশ ও সেনাবাহিনীর নিরাপত্তার স্বার্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব নয়।’ অধিবেশনে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন কথায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান সিনেট চেয়ারম্যান রাজা রব্বানি। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শাহীদ খাকান আব্বাসি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংসদ অবমাননার দায়ে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে সিনেট চেয়ারম্যান রব্বানি জানতে চান, ‘সৌদি আরবে আগে থেকে ১ হাজার ৬০০ সেনা মোতায়েন রয়েছে। তারপরও কেন নতুন করে সেখানে আরো ১ হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে? এসব সেনা কোথায় মোতয়েন করা হবে?’

এর জবাবে মন্ত্রী খুররম দস্তগীর বলেন, ‘সৌদিতে সেনা পাঠানোর প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শাহীদ খাকান আব্বাসি অনুমোদন দিয়েছেন। তারপর সেখানে সেনা পাঠানো হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। সব কথা বলা যাবে না।’

এমন জবাবে সিনেট চেয়ারম্যান রব্বানি বলেন, ‘আপনারা সংসদকে পাশ কাটিয়ে অন্য দেশে সেনা মোতায়েন করবেন, আবার সংসদের শ্রেষ্ঠত্বের কথাও বলেন। কিন্তু কেন?’

এরপর প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার মাধ্যমে আপনি মহান সংসদের সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছেন। ফলে আপনার এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।’

সিনেট চেয়ারম্যান বলেন, ‘সৌদিতে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি আগে থেকে জানার পরও প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী তা গোপন রেখেছেন। গত কয়েক মাস ধরে তারা বিষয়টি অবহিত না করে সংসদের প্রতি অনাস্থা দেখিয়েছেন।’

তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আরো বলেন, ‘আপনি আমাদের ললিপপ দেবেন না; আমরা কেউ শিশু নই। এমন আচরণের আপনাদের বিরুদ্ধে কেন সংসদ অবমামনার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে না?’

সিনেটর ফরহাতুল্লাহ বাবর বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, এসব নেসাকে সৌদির ইয়েমেন সীমান্তবর্তী এলাকায় মোতায়েন করা হবে। আপনি পরিষ্কার করে বলুন, তাদের আসলে কোথায় মোতায়েন করা হবে?’

এর জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সৌদির কোথায় সেনাদের মোতায়েন করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইবেন না। কারণ প্রতিরক্ষার জন্য তা প্রকাশ করা যাবে না।’

এরপর তিনি আরব মিত্র দেশ সৌদিতে নতুন করে সেনা মোতায়েনের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন এবং এটি পাকিস্তানের নিরাপত্তার স্বার্থেই করা হচ্ছে বলে দাবি করেন। কিন্তু সিনেট অধিবেশন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর-এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সৌদি আরবে নতুন করে প্রায় এক ডিভিশন সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। আর এ বিষয়ে জানতেই প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সিনেটে তলব করা হয়।