পবিত্র কোরআন সংরক্ষণে দুই মাইল লম্বা সুড়ঙ্গ

ইসলাম ধর্মের অত্যন্ত পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন।  বলা হয়, কুরআন হলো মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মুসলমানরা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করেন পবিত্র এই কোরআন। তারপরও অনেক সময় ঘরের কোণে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে পড়ে থাকে পবিত্র এই গ্রন্থ। পুরনো এসব কোরআন সংরক্ষণে পাকিস্তানে রয়েছে দুই মাইল দীর্ঘ এক সুড়ঙ্গ। যেখানে পরম যত্নে সংরক্ষিত থাকে পবিত্র আল কোরআনের পুরনো জীর্ণ-শীর্ণ কপিগুলো।

দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে কোরআন মজিদ খণ্ড খণ্ড অংশে নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়। কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর হাজারবার সংকলন হলেও এটি বিন্দু মাত্র পরিবর্তন হয়নি। কেননা মহান আল্লাহতালা বলেছেন, ‘আমি স্বয়ং এই পবিত্র গ্রন্থ অবতরণ করেছি আর আমি নিজেই এর সংরক্ষক।’ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন আর নিজ ধর্মের প্রতি ভালবাসা থেকেই কোরআন সংরক্ষণে এতোটাই নিবেদিত প্রাণ মুসলমানরা। 

ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে আল কোরআনকে সতর্কতার সাথে সংরক্ষণের লক্ষ্যেই পাকিস্তানের এই সুরঙ্গটি ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তানের কোয়েটা শহরের নিকটবর্তী এক পর্বতমালায় দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গটি তৈরি করা হয়েছে। ব্যতিক্রমী এই বিষয়টি সচক্ষে দেখতে সেই সুড়ঙ্গ পথে গিয়েছিলেন বিবিসির একজন সংবাদিক। সেখানে তিনি দেখতে পান, ওই সুড়ঙ্গপথে ছিঁড়ে যাওয়া হাজার-হাজার পুরনো কোরআন এনে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

মুসলিমরা মনে করেন, পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য একটি বড় নেয়ামত। তাই এই ধর্মগ্রন্থ পুরনো হয়ে গেলে অথবা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে গেলে তা যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়া উচিত নয়। এটিকে সম্মানের সঙ্গে সংরক্ষণ অথবা ধ্বংস করে ফেলা উচিৎ।

মুসলমানদের এমন বিশ্বাসের কারণেই পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকা থেকে পবিত্র কোরআনের পুরনো কপিগুলো এনে পাহাড়টির নিচে জমা করা হয়। সেখানে প্রায় দুই মাইল দীর্ঘ যে সুড়ঙ্গ রয়েছে, তার ভেতরে দুই পাশে পুরনো কপিগুলো বস্তায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি বস্তায় আট থেকে দশটি কোরআন রাখা হয়।

এ সুড়ঙ্গে কোরআন সংরক্ষণে কাজ করেন আব্দুর রশিদ লেহরি। তিনি বিসিবিকে বলেন, ‘আমার বড় ভাই কোরআন খুব ভালোবাসেন। বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়া কোরআন তিনি নিজে থেকে সংগ্রহ করে একজায়গায় জড়ো করতেন। নিজের গাড়িতে করে সেসব কোরআনকে তিনি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করতেন। তার এ উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে পরে আমরা এ জায়গাটি প্রতিষ্ঠা করেছি।’

তাদের এই উদ্যোগটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পাকিস্তান তো বটেই, গোটা বিশ্বে। ফলে কোরআন প্রেমীরা প্রতিদিন ওই সুড়ঙ্গ এলাকায় ভিড় জমান। অনেকে বহু পুরনো কোরআন নিয়ে এখানে আসেন। ফলে সেখানকার চারপাশে পুরনো কোরআনের স্তূপ তৈরি হয়েছে।

পুরনো কোরআনের কপি সংগ্রহ করার পর তা সংরক্ষণের জন্য বাছাই করা হয়। এছাড়া যেসব কোরআনের পৃষ্ঠা খুব বেশি ছিঁড়ে যায়নি, সেগুলোকে আলাদা করে নতুন করে বাধাই করা হয়। এরপর তা বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা এবং দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়। আর যেসব কোরআন বাধাই করার মতো অবস্থায় নেই সেগুলোকে বস্তায় করে সুড়ঙ্গের ভেতরে রাখা হয়।

কোরআন রাখার জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় পর্বতটির নিচে প্রতিনিয়ত সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ চলছে। তবে শক্ত পাথর কেটে এ সুড়ঙ্গটি তৈরি করতে হয় বলে কাজ যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ও ধীরগতিতে এগুচ্ছে। কিন্তু তারপরেও থেমে নেই উদ্যোগটি। কোরআনের প্রতি ভালবাসাই এ মহান উদ্যোগকে এগিয়ে নিচ্ছে।