মিশরে প্রথম মহিলা মিনিবাস চালক ওম আবদুল্লাহ

বোরকা এবং নিকাব পরা এই নারীই হচ্ছেন মিশরের রাজধানী কায়রোর প্রথম মহিলা মিনিবাস চালক। তার নাম ওম আবদুল্লাহ। মিনিবাসটি শুধুমাত্র মহিলা যাত্রীদেরই সেবা দেয়া হয়ে থাকে। এক চরম প্রতিকূলতার মধ্যেই ওমকে বাসটির চালক হতে হয়েছে।

ওমের স্বামী আবদুল্লাহ মিনিবাসটির চালাতেন। কিন্তু গত বছর স্বামী মারা যাবার পর নিরুপায় হয়ে পড়েন তিনি। পরে বাধ্য হয়েই সংসার চালানোর জন্য অর্থ আয়ের উৎস হিসেব মিনিবাসটি চালানোর কাজ শুরু করেন ওম।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে ওম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাকে চলতে হবে। ছেলে-মেয়েদের মানুষ করতে হবে। তাই কিছু একটা তো করতে হবে। এমন একটি অবস্থার মধ্যে আমি গাড়ি চালানোর কথা ভাবলাম।’

তিনি বলেন, ‘গাড়ি চালানোটা খারাপ কাজ নয়। তাছাড়া আমি এ কাজটা পছন্দও করি। যদিও এর আগে কোনদিন মিনিবাস চালাইনি। একদিন ওদের কাছে গিয়ে বললাম আমি শিখতে চাই। আসলে কোন কাজ শেখা-ই কঠিন কিছু নয়।’

কায়রোর অন্যতম জনপ্রিয় গণপরিবহন হচ্ছে এই মিনিবাস। ওমকে চালকের চাকরি দেন একটি মিনিবাস কোম্পানি প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ফাতিমা এবং তার স্বামী সায়েদ। ফাতিমা বলেন, ‘চাকরি খুঁজছিলেন ওম আবদুল্লাহ। তার কাছে বেশ কয়েকবার এসেছিলেন তিনি। তিনি আসলে কি করতে চান জানতে চাইলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আমি গাড়ি চালাতে চাই।’

মিনিবাস কোম্পানিটি মহিলাদের কর্মস্থলে বাচ্চাদের নিয়ে আসার সুযোগ দিয়ে থাকে। ফাতিমা তার নবজাতক শিশুকে ডেস্কের পাশে রেখেই অফিস করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি গর্ভবতী অবস্থাতেও কাজ করেছি।’

ওম নারী হওয়ায় তাকে চালকের কাজ দেয়ার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিল কিছু পুরুষ চালক। তাদের কেউ কেউ বলেছিল, ‘মহিলারা চালক হলে আমাদের তো বাড়িতে বসে থাকতে হবে।’ এর জবাবে ফাতিমা বলেন, ‘আপনারা কাজ করতে না চাইলে মহিলারাই করবে।’

একটি সময় পর ধীরে ধীরে এই প্রতিকূল অবস্থা পাল্টাতে শুরু করল। নিজের অভিজ্ঞতার বিষয়ে ওম আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রথমে পুরুষ চালকদের আপত্তি থাকলেও এখন তারা আমাকে সহকর্মী হিসেবেই দেখে থাকে। আমি তাদের সহকর্মী হওয়ায় তারা খুশি।’

ওম আবদুল্লাহ বলেন, ‘মিনিবাস শুধু মহিলা যাত্রীদের সেবা দেয়ায় পুরুষ কর্তৃক নারী হয়রানি রোধে অনেক বেশি কার্যকর।’ তিনি মনে করেন, এটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরে ভবিষ্যতে মেয়েরা চালকের কাজে অনুপ্রাণিত হবে।