নিউজিল্যান্ডের দুগ্ধ শিল্প: যেখানে পশুদের কাছে হেরে গেছে মানবতা!

গরুর দুধ রপ্তানি করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি কুড়িয়েছে নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের গুড়ো দুধ মানেই অন্য দেশের চেয়ে আলাদা। বিশ্বের ২১৭ মিলিয়ন দুগ্ধবতী গাভীর ৬ মিলিয়নের মালিক নিউজিল্যান্ড। যদিও দেশটির জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে ৪ মিলিয়ন।

দুনিয়াজোড়া যত সুখ্যাতিই অর্জন করুক নিউজিল্যান্ড, তাদের এই দুগ্ধ শিল্পের অন্ধকার দিক উঠে এসেছে গোপন এক অনুসন্ধানে। দেশটিতে গাভী এবং বাছুরের সঙ্গে যে নির্মম ও নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়ে থাকে, রীতিমতো সেখানে মানবতার ন্যূনতম মানদণ্ডও হার মেনেছে।

সেইফ ফর এনিমেলসের সঙ্গে যৌথভাবে প্রাণী অধিকার গ্রুপ ফার্ম ওয়াচের গোপন ক্যামেরায় এই চিত্র ধরা পড়ে। নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপ ওয়াইকাটো-তে এই গোপন অনুসন্ধান চালানো হয়। আর তাতেই ধরা পড়ে গাভী এবং বাছুরদের প্রতি অবর্ণনীয় নির্যাতনের এক ভয়াবহ চিত্র।

দেখা যায়, বাছুর জন্ম নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই সেগুলোকে গাভী থেকে নিষ্ঠুর এবং সহিংস কায়দায় আলাদা করে নেয়া হচ্ছে। এরপর রাখা হয় অপেক্ষমাণ ট্রাকের খাঁচায়। এমনভাবে খাঁচায় ছুঁড়ে ফেলা হয় এবং গাদাগাদি করে রাখায় এতেই বহু বাছুর মারা যায়।

জন্ম নেয়ার পর মাত্র চার দিন বাঁচতে পারে বাছুরগুলো। এরপর সেগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় কসাইখানায়। নেয়ার পথে লাথি মারা থেকে ছুঁড়ে ফেলা সব ধরনের নিপীড়নের শিকার হয় বাছুরগুলো। কসাইখানায় নিয়ে জবাইয়ের আগে বাছুরগুলোর মাথায় মুগুর-পেটা করা হয়। বেশকিছু বাছুরকে পড়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত মেঝেতে।

ফুটেজে দেখা যায়, এক ব্যক্তি একটি বাছুরকে মুগুর-পেটা করার জন্য মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলার আগে মাথায় লাথি মারতে থাকে। এরপর ছোট্ট বাছুরটির পেটে লাথি মারতে শুরু করে। আবার দুটি বাছুরকে পেছনের পা দুটি ধরে খাঁচার দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।

বাছুরগুলো দুগ্ধ শিল্পের জন্যই দরকার। বছরে প্রত্যেকটি গাভীকে অবশ্যই একটি করে বাছুর দিতে হয়। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ বাছুর জন্ম নেয়। এসব বাছুরের কিন্তু মায়ের দুধ পান করা হয় না।

ফার্ম ওয়াচ জানিয়েছে, গোটা নিউজিল্যান্ডেই দুগ্ধ খামারগুলোতে একই চিত্র। সেখানে ভয়ঙ্কর নির্মমতার শিকার হচ্ছে বাছুর এবং গাভী দুটোই। বেশি দুধ পেতে মাত্রাতিরিক্ত জেনেটিক্যাল মোডিফিকেশন এবং অতিরিক্ত দুধ সংগ্রহের কারণে গাভীর শারীরিক অবস্থা থাকে শোচনীয়। দিনে ছয়-সাতবার পর্যন্ত দুধ দোহন করা হয়।

একটি ফুটেজে দেখা যায়, সদ্যোজাত বাছুরকে টেনে-হিঁচড়ে খাঁচায় তুলে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর সেটির পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে মা গাভীটি। হয়তো নিজের বাছুরের নির্মম পরিণতি টের পেয়ে গেছে গাভীটি।

ফার্ম ওয়াচ পশুর প্রতি এমন ধরনের নির্মমতার তদন্ত দাবি করেছে। একই সঙ্গে এই নির্মমতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের উৎপাদিত গরুর দুধ বর্জনের জন্য বিশ্বের সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।