৭৩ হাজার বছর আগের শিল্পকর্ম আবিষ্কার: কি আছে এতে?

বিশ্বের সবচে প্রাচীন শিল্পকর্মের সন্ধান পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। যা প্রায় ৭৩ হাজার বছরের পুরনো। গত বুধবার বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘ন্যাচার’-এর একটি নিবন্ধে এমনটাই দাবি করেছেন গবেষণার সাথে যুক্ত কয়েকজন বিজ্ঞানী।

এর আগে পৃথিবীর প্রাচীনতম শিল্পকর্ম আবিস্কৃত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া ও স্পেনে। যা প্রায় ৩০ হাজার বছরের পুরাতন ছিল। নতুন এ আবিস্কার নৃতাত্ত্বিক গবেষণাকে নতুন মাত্রা প্রদান করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অনুমান। পাশাপাশি এটি অনেক পূর্বাণুমানকে ভেঙ্গে দিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস। বিশেষত, আফ্রিকান সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে নতুনভাবে পর্যালোচনার সুযোগ করে দিতে পারে।

বিজ্ঞানীরা আসলে কীসের সন্ধান পেয়েছেন?
নৃবিজ্ঞানীরা শিল্পকর্ম সমৃদ্ধ একটি ধুসর রঙের মসৃন পাথরের সন্ধান পেয়েছেন। যার গায়ে আগুনের তাপ দিয়ে খোদাইকৃত নকশা রয়েছে। এক ইঞ্চি থেকে দেড় ইঞ্চি মাপের নকশাগুলো আগুনের তাপে খয়েরি বর্ণ ধারণ করেছে। ধূসর, লাল, সাদা, খয়েরি রঙের সমন্বয়ে এটি একটি রঞ্জক পদার্থের মতো রূপ ধারণ করেছে।

চিত্রকর্মটি কোথায় পাওয়া গেল?
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন শহর থেকে ১৮৫ মাইল পূর্বে বোলম্বস দুর্গ থেকে এই শিল্পকর্মটি আবিস্কার করা হয়েছে। দুর্গটিতে আগে মানুষের বসবাস ছিল। সেখানে এক দল মানুষের ধ্বংসাবশেষ, তাদের ব্যবহৃত শিকারের যন্ত্র ও খাদ্যের গুদামের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে কোন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্ভবত পার্শ্ববর্তী রোজ পাহাড়ের বালু ধ্বসে দুর্গটির মুখ আটকে গিয়েছিল এবং ভিতরে থাকা মানুষেরা জীবন হারিয়েছিল। সম্প্রতি দুর্গটিতে সেই মানুষের সন্ধান পাওয়া গেলে বিজ্ঞানীরা তা নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে সেখান থেকেই সেসব আদি মানবদের একটি শিল্পকর্ম আবিষ্কৃত হল।

আবিষ্কৃত পাথরটি গুরুত্বপূর্ণ কেন?
পাথরটি তৎকালীন মানুষদের শিল্পবোধ তুলে ধরতে ভূমিকা পালন করবে। আদি শিল্পের নমুনা ও প্যাটার্ন গবেষকদের সভ্যতা সম্পর্কিত আবিস্কারে সহায়তা করে; ইউরোপের আদি ইতিহাসও এ ধরণের প্রাচীন পাথরের শিল্প থেকে আবিস্কার করা হয়েছে। তাছাড়া, আবিস্কৃত শিল্পকর্মটিতে টেবিলাকৃতির নকশা দেখা যাচ্ছে, যা গবেষকদের কাছে বেশ রহস্যময় ও গুরুত্ববহ মনে হচ্ছে। ফলে এটি আফ্রিকান সভ্যতার আদি ইতিহাস জানাতে সহায়তা করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা কী এটাকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন?
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরাটস প্রফেসর ও নৃবিজ্ঞানী মারগ্রেট কেনেডি এটিকে 'গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। দীর্ঘদিন গুহা ও দুর্গের শিল্প নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত এই বিজ্ঞানী বলেন, 'বিষয়টি ও এর সময়টি আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান বলে মনে হয়েছে। আমরা সম্মিলিতভাবে বেশ কয়েক বছর যাবত এটি নিয়ে কাজ করছি। আমরা বিষয়টিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করে দেখছি। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় আবিস্কার।'

বিষয়টি কী আসলেই শিল্পকর্ম পর্যায়ের?
পরিশেষে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, এটি কী আসলেই শিল্পকলা পর্যায়ের কোন কিছু- নাকি কোন সাধারণ বা প্রাকৃতিক কোন অঙ্কন মাত্র। গবেষণার সাথে যুক্ত বার্জিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও নৃবিজ্ঞানী ক্রিস্টফার হেনশিলউড বলেন, 'আমরা হয়ত এখনই এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্পকর্ম বলতে পারছি না, তবে এটি সন্দেহাতীতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ নমুনা।

তিনি বলেন, শিল্প পরিভাষাটির সংজ্ঞায়ন খুবই জটিল। আমরা কী পিকাসোর অ্যাবসট্রাককে শিল্প বলতে পারি? কে স্বীকৃতি দেবে যে এটি শিল্প নাকি শিল্প না?

হেনশিলউডের বিশ্বাস অচিরেই শিল্পকর্মটি বিশেষজ্ঞদের অনুমোদন পাবে এবং আফ্রিকার মানব সভ্যতা সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য উদ্ঘাটনে সহায়তা করবে।