ছাত্রজীবনে অর্থ উর্পাজনে টিউশনির বিকল্প

ছাত্রজীবন মানেই কিছুটা 'অভাব-অনটনের' সময়। জীবনের এই অধ্যায়টা সবসময় একটু অন্যভাবেই লেখা থাকে সবার কপালে। হাতখরচের প্রচুর খাত থাকলেও সেই খরচ উপার্জনের তেমন কোনো মাধ্যম প্রায় সবারই থাকে না। একটা-দুইটা প্রাইভেট টিউশনি মাঝে মাঝে দু দণ্ড শান্তি দিলেও অনেকের ভাগ্যেই টিউশনি করানোর সুযোগ হয় না। এদিকে নিজের বাবার কাড়ি কাড়ি টাকা থাকলেও প্রতি মাসে জন্মদাতা বাবার কাছেও হাত পেতে টাকা চাইতে লজ্জা করে। এ এক অদ্ভুত সময়।

শিক্ষাজীবনের এই অধ্যায়ে অর্থ উপার্জন করতে না পেরে অনেকেই নানারকম হতাশায় ভোগেন। ছাত্র নং অধ্যয়ং তপঃ -এই আপ্তবাক্য তখন বিরক্তির উদ্রেক করে। কিন্তু চাইলে একাডেমিক ডিগ্রী পাওয়ার আগেই নানারকম কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে। তেমনই কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ফ্রিল্যান্সিং

বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। অনলাইনের এ পেশা বেছে নিয়ে শিক্ষার্থীরা যেমন সম্মানজনক অবস্থানে অর্থ উপার্জন করছে, তেমনই বাঁধা ধরা সময়ে হাজিরা দেওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাচ্ছে। এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে পাঁচ লক্ষাধিক ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। এই সংখ্যাটা ক্রমাগত বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি কী। ধরুন, আপনি আঁকতে ভালোবাসেন, তাহলে গ্রাফিকস ডিজাইন শিখুন। গণিতে ভালো হলে প্রোগ্রামিং বা ওয়েব ডিজাইনিং শিখে ফেলুন। এমনকি সুযোগ আছে ফটোগ্রাফিতেও। তবে বেসিক লেভেলের কোনো কাজ না শিখে পেশাদার পর্যায়ের কাজটা শিখুন। এরপর অভিজ্ঞ কারো সঙ্গে আলাপ করলেই কি করে কাজ পাবেন তা জানতে পারবেন।

অনুবাদক

বিদেশি ভাষায় দক্ষতা থাকলে আপনি ঘরে বসেই আয় করতে পারবেন। ইন্টারনেটে অনেকেই ভালো অনুবাদক খোঁজে যার বিনিময়ে সম্মানজনক পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। অনুবাদের কাজ করলে একই সঙ্গে অর্থ উপার্জন, কাজের দক্ষতা এবং ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি সম্ভব হবে। ঢাকায় অনেক অনুবাদ কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে অনেকেই অবসর সময়ে গিয়ে দুই এক পৃষ্ঠা করে অনুবাদ করে থাকেন। এসব অনুবাদ কেন্দ্রে প্রতি পৃষ্ঠায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা সম্মানী পাওয়া সম্ভব। এছাড়া নানা ধরণের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন অনুবাদের সুযোগ পাওয়া যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুবাদের কাজ নিয়ে মাসে আট থেকে কুড়ি হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।

প্রোডাক্ট রিভিউয়ার

এখন প্রায় প্রত্যেকেই যেকোন পণ্য কেনার আগে ইন্টারনেটে সেই পণ্যটির রিভিউ খোঁজেন। এক জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৮০ শতাংশ ভোক্তার মত, প্রোডাক্ট রিভিউ তাদের কেনাকাটার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। তাই প্রোডাক্ট রিভিউয়ের প্রয়োজনীয়তা এখন অত্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া অনলাইন শপিংয়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তা বাড়ায় পণ্যের রিভিউ লিখে মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছে অনেক শিক্ষার্থী। এর জন্য চাই ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা। আপনার পর্যালোচনা পড়ে কোনো ক্রেতা অ্যামাজনের পণ্য কিনলে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে কমিশন পাবেন। প্রোডাক্ট রিভিউ অ্যাফিলিয়েটেড মার্কেটিংয়ের অন্যতম মাধ্যম।

ইউটিউবার

অনলাইনে আয়ের জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হচ্ছে ইউটিউব। ইউটিউবে নিজের একটি চ্যানেল খুলে শিক্ষণীয় বা মজাদার ভিডিও আপলোড করতে পারেন। আপনার চ্যানেলটি জনপ্রিয় হলে ইউটিউবের অ্যাডসেন্স পার্টনারশিপ থেকে অফার পেতে পারেন। ওদের অংশীদার হতে পারলে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন সম্ভব।

তবে এক ভিডিওর নামে আপলোড দিয়ে অন্য ভিডিও দেখালে আয় তো দূরের কথা, উল্টো চ্যানেলটি বন্ধ করে দিতে পারে ইউটিউব। যেসব চ্যানেলে ১০ হাজারের কম ভিউ হয়, সেগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধন্ত নিয়েছে গুগল। তবে ইউটিউবের নিয়ম মেনে ঠিকমতো চ্যানেল চালাতে পারলে ভালো অঙ্কের অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।

লেখালেখি

ইন্টারনেটের সবকিছুই কন্টেন্ট নির্ভর। ইন্টারনেটে যা কিছু তথ্য আমরা দেখি বা পড়ি তার সবই কেউ না কেউ লিখছে। ভালো লেখার হাত থাকলে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পার্টটাইম কিংবা ফুলটাইম কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকাগুলোতে বা ম্যাগাজিনে এমনকি দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও ভালো লেখার বেশ কদর রয়েছে। এতে করে আপনার নানামুখী ক্যারিয়ার তৈরির সুযোগ রয়েছে। 

খণ্ডকালীন চাকরি

দেশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, ফ্যাশন হাউজ নিয়মিত খণ্ডকালীন কর্মী নিয়ে থাকে। বিশেষ করে যে কোনো উৎসবের আগে আগে এ ধরণের হাউসগুলো কর্মী নিতে বেশি আগ্রহ দেখায়। এসব প্রতিষ্ঠানে চাইলে লেখাপড়ার সময় রেখেও কাজ করার সুযোগ থাকে।

ছোটখাটো ব্যবসা

ভবিষ্যতে বড় উদ্যোক্তা হতে চাইলে ছাত্রজীবন থেকেই সেটার সূচনা করা ভালো। তবে এক্ষেত্রে পড়ালেখার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাই এদিকে নিজেকেই খেয়াল রাখতে হবে। বাসায় বসে বা স্বল্প পুঁজিতে যেসব ব্যবসা করা যায়, সেসব নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অনলাইনে ব্যবসা হতে পারে একটি অন্যতম একটি পছন্দ।

এছাড়া আরও নানাভাবে অর্থ উপার্জনের পথ বের করে নেয়া সম্ভব। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই চাই নিজের অদম্য ইচ্ছা ও কাজের প্রতি তীব্র ভালোবাসা। তাহলে ছাত্রজীবনে অর্থ নিয়ে খুব বেশি হতাশায় ভুগতে হবে না।