ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, কারো এই রোগ হলে কী খাবে আর কী খাবে না সেই তালিকা করাই দুষ্কর। যেসব রোগী টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা রক্তে সুগার লেভেল বেড়ে যাবে এমন খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকেন। বিশেষ করে কোমল পানীয়তে থাকা সুগার থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেন অনেকে।

diabetes diet soda

তবে এখন সুগার-ফ্রি তথা চিনিমুক্ত কোমল পানীয় কিংবা খাবারের বিজ্ঞাপন হরহামেশাই দেখা যায়। মূলত চিনির পরিবর্তে এখানে এক ধরনের সোডা ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা কৃত্রিম চিনির স্বাদ তৈরি করে। ক্যালরি এবং চিনির মাত্রা কম হওয়ায় অনেক ডায়াবেটিস রোগী এটাকে বিকল্প ভাবতে শুরু করে করেছেন। তবে বাস্তবতা কি তা-ই?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেছেন, ডায়াবেটিস রোগীদের পানির বাইরে তারা কোনো পানীয় সুপারিশ করেন না। এর মানে এই নয় যে, ডায়াবেটিস রোগীদের কোনো পানীয়র প্রতি আগ্রহ থাকবে না, তারা মাঝেমধ্যে তা পান করতে পারেন।

তিনি বলেন, খাবার ও ওষুধ প্রশাসন কিছু সুগার-ফ্রি পানীয় এবং সোডা অনুমোদন দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আমরা সুগারযুক্ত পানীয়র পরিবর্তে ডায়েট সোডার পানীয় পানের সুপারিশ দিয়ে থাকি, কিন্তু পরিমিত পর্যায়ে। অর্থাৎ আমরা ডায়েট সোডাকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একেবারে না করে দিচ্ছি না, কিন্তু সেটা থাকতে হবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে।

ডায়েট সোডাযুক্ত পানীয় পানে মূলত কৃত্রিম চিনির স্বাদ পাওয়া যায়। কৃত্রিম চিনির উপকরণ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কিনা এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। ডায়েট সোডায় মূলত অ্যাস্পারটেইম এবং স্যাকারিন নামে দুটি কৃত্রিম চিনির স্বাদের উপকরণ পাওয়া যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খাবার এবং ওষুধ প্রশাসন দুটি উপকরণই অনুমোদন দিয়েছে। আমেরিকার ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন এগুলো নিরাপদ বলেও ঘোষণা দিয়েছে।

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, পুষ্টিগুণ না থাকলেই কোনো খাবার কিংবা পানীয় শরীরের জন্য নিরাপদ নয় সেটা বলা যাবে না। তেমনটি একটি হলো ডায়েট সোডা যার কোনো পুষ্টিগুণ নেই। কিন্তু তারপরও ডায়েট সোডাকে স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ বলা হয়েছে।

কার্বোনেটেড কোল্ড ড্রিংকস মেরুদণ্ডের হাড়ে চিড় ধরনোর মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটা হওয়ার ঝুঁকি আরো বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম চিনির উপকরণ শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে পাকস্থলীতে চিনি গ্রহণের সেলও বাড়তে পারে। ফলে ওষুধ সেবন করছেন এমন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

অ্যাস্পারটেইম: ডায়েট সোডায় কৃত্রিম চিনির উপকরণ হিসেবে অ্যাস্পারটেইম সচরাচর ব্যবহার হয়ে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাস্পারটেইম অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করতে পারে যা ডায়াবেটিস রোগীদের লিভার এবং কিডনির স্বাভাবিক কাজ বিঘ্নিত করতে পারে। এমনকি স্থূলকায় ব্যক্তিদের শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও অ্যাস্পারটেইমের ভূমিকা আছে। এগুলো ডায়াবেটিসের আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

সর্বোপরি, সবকিছুরই ভালো-মন্দ দুটি দিক আছে। ডায়েট সোডাও তেমনই একটি। অন্য কোমল পানীয়র তুলনায় এতে রয়েছে কম পরিমাণে ক্যালরি এবং কর্বোহাইড্রেট। যেহেতু অনেকেই পানীয়র প্রতি আগ্রহ একেবারে শূন্যে আনতে পারেন না, সেক্ষেত্রে তারা ডায়েট সোডা তথা সুগার-ফ্রি ডায়েট পানীয় পান করতে পারেন, কিন্তু অবশ্যই সেটা হতে হবে নিয়ন্ত্রিত এবং পরিমিত।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.