বাঁচানো গেল না শিনজো অ্যাবেকে

নির্বাচনী প্রচারণার সময় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন সময়ের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবেকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা। অ্যাবের এমন মৃত্যুতে হতভম্ব হয়ে পড়েছে জাপানি সমাজ।

শিনজো আবে, ১৯৫৪-২০২২

স্থানীয় সময় আজ সকাল সাড়ে ১১টায় জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় নারা শহরে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতাকালে গলায় ও ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সময় তিনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে স্থানান্তরের পর চিকিৎসকরা তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।

আগামী সপ্তাহে জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছিলেন দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী এ রাজনীতিক। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলিবর্ষণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাতসুয়া ইয়ামাগামী নামের ৪১ বছর বয়সী সন্দেহভাজন হত্যাকারী ২০০২-২০০৫ সময়কালে জাপানের সেলফ ডিফেন্স ফোর্সেসের (সশস্ত্র বাহিনী) সদস্য ছিলেন বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

শিনজো অ্যাবেকে দেশীয় অস্ত্রের সাহায্যে গুলি করা হয় বলে পুলিশের বরাতে এনএইচকে জানিয়েছে। জাপানের জনসমাজে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা নেই বললেই চলে। দেশটিতে এমন সহিংস হত্যাকাণ্ড জনমনে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটা নিষ্ঠুরতার এক চরম ঘৃন্য কাজ। এ অপরাধ কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়।

এর আগে জাপানে কোনো হাই-প্রোফাইল রাজনীতিককে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সবশেষ ১৯৬০ সালে। সে বছর জাপান সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা ইনেজিরো আসানুমাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোরিহিরো হোসাকাওয়াকে হত্যার চেষ্টা হলেও সৌভাগ্যবশত তা ব্যর্থ হয়।

২০০৬-২০০৭ ও ২০১২-২০২০ সময়কালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শিনজো অ্যাবে। ক্ষমতায় থাকাকালে ইতিহাস সম্পর্কে নিজের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গী ও অর্থনৈতিক উত্থান পরিকল্পনার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ পরিচিতি পান তিনি। চীন ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াসহ সমমনা দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক মোর্চা গঠনের অন্যতম কুশীলব ছিলেন শিনজো অ্যাবে।

দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়লেও ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রাজনৈতিক কর্মকা-ে পুরোদস্তুর সক্রিয় ছিলেন শিনজো অ্যাবে। জাপানের পার্লামেন্টে এলডিপির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্লকটির নেতা ছিলেন তিনি।

শিনজো অ্যাবের মৃত্যুতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রয়াত নেতার পরিবার ও জাপানের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও অন্যান্য সরকারপ্রধান।