৪৮ ঘণ্টায় নেই ৫২ বিলিয়ন ডলার

ভুয়া অডিট ও জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানোর খবর প্রকাশের পর ৪৮ ঘণ্টায় ৫২ বিলিয়ন ডলার কমেছে ভারতের আদানি গ্রুপের বাজারমূল্য। গ্রুপের কর্ণধার ও এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদ কমেছে ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। খবর বিবিসি, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গৌতম আদানি (ছবিতে বামে)

আদানি গ্রুপ তাদের বিষয়ে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন ‘ত্রুটিযুক্ত’ ও ‘দুর্বল গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি’ বলে দাবি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি হিনডেনবার্গের বিরুদ্ধে মামলার হুমকিও দিয়েছে।

মামলার হুমকিকে স্বাগত জানিয়ে হিনডেনবার্গ রিসার্চ বলেছে, আমরা বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং নিজেদের প্রতিবেদনের পক্ষে অটল অবস্থান ঘোষণা করছি। আমরা আদানি গ্রুপকে মার্কিন আদালতে মামলা দায়েরের আহ্বান জানাচ্ছি যাতে আদালতের মাধ্যমে তাদের কিছু নথিপত্র তলব করতে পারি।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস আদানি গ্রুপের অডিট ও শেয়ার কেলেঙ্কারির বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। দলটি এ বিষয়ে ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআইকে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদ্বীপ সিং সুরযেওয়ালা বলেছেন, আদানি গ্রুপের অডিট কারসাজি ও শেয়ার জালিয়াতি নিয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সে বিষয়ে জোরালো তদন্ত প্রয়োজন। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো আদানি গ্রুপে কত বিনিয়োগ করেছে, তারও অনুসন্ধান জরুরি।

তিনি বলেন, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও অন্য কয়েকটি ব্যাংক আদানি গ্রুপে ৮১ হাজার ২০০ কোটি রুপির শেয়ার কিনেছে। আদানি গ্রুপে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার (এলআইসি) ৭৭ হাজার কোটি রুপির শেয়ার ছিল, যার বাজারমূল্য দুইদিনে কমে ৫৩ হাজার কোটি রুপি হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে আদানি গ্রুপকে ঋণ দিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে, আবার তাদের শেয়ার কিনেও লোকসানে পড়েছে। এরপরও আরবিআই, সেবি, ইডি, সিবিআই চুপ করে বসে আছে।

মিন্টের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে আদানি গ্রুপের মোট শেয়ারের বাজারমূল্য প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার কোটি রুপি করে বেড়েছে। এর বরাতে খুব দ্রুত এশিয়ার শীর্ষ ও বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী হয়ে ওঠেন গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি।

ফোর্বস জানিয়েছে, গত দুইদিনে গৌতম আদানি বিশ্বের শীর্ষধনী তালিকায় তৃতীয় স্থান থেকে নেমে সপ্তম স্থানে গেছেন। আদানি গ্রুপে তার মালিকানাধীন শেয়ারের মোট মূল্য ৪৮ ঘণ্টায় ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার কমেছে। আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারেও বিরাট ধস নেমেছে, যার কারণে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে শনিবার লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবার ঘটনাও ঘটেছে।

এর আগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে ভুয়া অডিট রিপোর্টের মাধ্যমে কোম্পানির মুনাফা ও সম্পদে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে আদানি গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানের কর্নধার গৌতম আদানি তার দুই ভাই ব্রজেশ আদানি ও বিনোদ আদানি এবং ঘনিষ্ট সহযোগীদের মাধ্যমে সাইপ্রাস ও অন্য কয়েকটি অফশোর টেরিটরিতে নামসর্বস্ব অসংখ্য কোম্পানি খুলেছেন।

এতে বলা হয়, গৌতম আদানি ও তার ভাইয়েরা নামসর্বস্ব ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে বারবার হাতবদল ঘটিয়ে বাজারে আদানি গ্রুপের শেয়ারের কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করেছেন এবং শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়িয়েছেন।