যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকহারে বাড়ছে হালাল খাবারের চাহিদা

যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে হালাল খাবারের চাহিদা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হালাল খাবার ও পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র বিভাগের ওয়েবসাইট শেয়ার ডট আমেরিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় হালাল খাবারের দোকান

পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম জনসংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার তুলনায় বেশ কম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলমানদের সংখ্যা সেখানে দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে আমেরিকান অর্থনীতিতে মুসলমানদের অংশগ্রহণও। এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে হালাল হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলার হার যে গতিতে বাড়ছে, তাতে স্পষ্টই বোঝা যায়, আমেরিকান অর্থনীতিতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

বিষয়টি নিয়ে ২৫ বছর আগে কাজ শুরু করেছিলেন শাহেদ আমানউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। তিনি হালাল ব্যবসার তালিকার তথ্যসমৃদ্ধ একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছিলেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক খাবার পরিবেশন করা হয় এমন হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০। বর্তমানে সেই ওয়েবসাইটে যুক্ত হয়েছে ১৩ হাজার হোটেল-রেস্তোরাঁর নাম, যেগুলোতে পুরোপুরিভাবে হালাল খাবার বিক্রি ও পরিবেশন করা হয়।

হালাল খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা

রান্নার বই, মাই হালাল কিচেনের লেখক ইভান মাফেইয়ের মতে, হালাল খাবার এখন আমেরিকান সমাজের মূলধারায় স্থান করে নিয়েছে। ১৫ বছর আগে এটি কেবল মুসলিমদের খাবার ছিল। কিন্তু এখন নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই হালাল খাবার পছন্দ করছে।

ইন্সটাগ্রামার সারাহ আব্বাসী বলেন, আপনি ওয়াশিংটনের মতো এলাকায় যেকোনো সংস্কৃতি বা জাতিগোষ্ঠীর হালাল উপায়ে রান্না করা খাবার খুঁজে পেতে পারেন।

আমানউল্লাহ বলেন, ২০০০ সালের দিকে তুলনামূলকভাবে অল্প কয়েকটি হালাল রেস্তোরাঁ দেখা যেত, যেগুলো আকারে ছোট ছিল এবং মূলত পারিবারিকভাবে পরিচালিত হতো। তাদের গ্রাহকদের বড় অংশ ছিল আরব বা দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। এখন এ ধরনের রেস্তোঁরার গ্রাহক অনেক বেড়েছে।

আমানউল্লাহ হালাল রেস্তোরাঁর বা হালাল খাবারের দ্রুত সম্প্রসারণের পেছনে দুটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে, বাজারে মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ এবং রেস্তোরাঁগুলোতে কম ব্যয়ে হালাল পণ্য ক্রয়ের সুযোগ।

আমানউল্লাহ বলেন, বেশকিছু রেস্তোরাঁ পরীক্ষামূলকভাবে হালাল মেন্যু পরিবেশন করে বেশ সাফল্য পেয়েছে। এরপর থেকে তারা তাদের রেস্তোরাঁয় পাকাপাকিভাবে হালাল মেন্যু চালু করেন এবং বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়ে তারা তাদের রেস্তোরায় হালাল স্টিকার লাগান।

ভার্জিনিয়ার ফলস চার্চে ঐতিহ্যবাহী মেক্সিকান রেস্তোরাঁ লা টিঙ্গেরিয়ার মালিক ডেভিড আন্দ্রেস পেনিয়া বলেন, হালাল খাবার চালু করায় আমরা সহজেই আমাদের রেস্তোরাঁকে অনেক প্রতিযোগী থেকে আলাদা করে ফেলতে পেরেছিলাম। যেখানে অন্য কোনো মেক্সিকান রেস্তোরাঁ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আলাদাভাবে ক্রেতা হিসেবে বিবেচনা করত না, তখন আমরা সেটা করেছি। অন্যরা যখন তাদের রেস্তোরাঁয় শুকরের মাংস ও মদ বিক্রি করছিল, তখন আমরা হালাল খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য গন্তব্য ঠিক করে দিয়েছিলাম। এর মধ্য দিয়ে অন্যান্য রেস্তোরাঁর চেয়ে আমরা অনেক বেশি এগিয়ে যাই।