ক্ষেপে আগুন শাহবাজ শরিফ: সব ডাকাতকেও মুক্তি দিয়ে দিন

পাকিস্তানে গত কয়েকদিনে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি যেমন নাটকীয় ছিল, তার চেয়ে বেশি নাটকীয় ছিল তার জামিনে মুক্তির বিষয়টি। তবে এভাবে ইমরানের মুক্তিতে ক্ষেপে আগুন হয়ে গেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সুপ্রিম কোর্টকে লক্ষ্য করে তিনি বলেছেন, এবার তাহলে দেশের সবগুলো ডাকাতকেও মুক্তি দিয়ে দিন। খবর দ্য ডন।

শাহবাজ শরিফ ও ইমরান খান

এর আগেও কয়েকবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু ভক্ত-সমর্থকদের কারণে তার গ্রেপ্তার কার্যকর করা যায়নি। সেই ইমরান খানকে গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই ইসলামাবাদের হাইকোর্ট চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে বিচারক তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই এক ঘণ্টার মধ্যে ইমরান খানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল। নির্দেশ মেনে তাকে আদালতে হাজির করা হলে প্রধান বিচারপতি তার আটককে বেআইনি ঘোষণা করে অবিলম্বে মুক্তির আদেশ দেন। আগামী ১৭ মে পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না মর্মেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি তার বিরুদ্ধে আনীত আলোচিত তোশাখানা মামলাও স্থগিত করা হয়।

শাহবাজ শরিফ সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতির নিন্দা জানিয়ে বলেন, পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার মৃত্যুর কারণ হল এই দ্বিচারিতা। ইমরানকে যখন দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির করা হচ্ছে, তখন প্রধান বিচারপতি তাকে দেখে বলছেন, আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। এগুলোই দ্বৈত মানদণ্ড, যা ন্যায়বিচারের মৃত্যু ঘটিয়েছে।

ফেডারেল মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি শাহবাজ বলেন, দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা বিচারের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবহারের মুখোমুখি হয়েছেন। আর ইমরানের বেলায় বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ সময় তার সরকার দেশে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনবে বলে অঙ্গীকার করেন ক্ষুব্ধ শাহবাজ।

তিনি মন্তব্য করেন, সাধারণ জনগণের হাজার হাজার মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অথচ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জামিনের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ইমরানের বিরুদ্ধে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বি আরটি), বিলিয়ন ট্রি সুনামিসহ বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু সে মামলাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

নাম উল্লেখ না করে শাহবাজ শরিফ বলেন, এই ব্যক্তির পক্ষেই যদি দাঁড়াতে চান, তাহলে দেশের সমস্ত জেলে বন্দি থাকা ডাকাতদেরও মুক্তি দিয়ে দিন। ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের কঠোর সমালোচনা করে তিনি দাবি করেন, ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধকালেও এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি।

পিটিআই সমর্থকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের ট্র্যাজেডি সত্ত্বেও এমন আচরণ লক্ষ্য করা যায়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ‘বিচারিক হত্যার’ পরেও কেউ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেনি। এমনকি শাহবাজ শরিফের মায়ের মৃত্যুর সময়েও তিনি কারাগারে ছিলেন, কিন্তু কোনো ধরনের দাঙ্গা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। অথচ ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর তা-ই হয়েছে। সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলার পেছনে ইমরানকে মাস্টারমাইন্ড দাবি করে তিনি একে মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহিদ সামরিক কর্মীদের জন্য অপমানজনক বলে অভিহিত করেন।

পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ইমরান খানকে দায়ী করে শাহবাজ বলেন, বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, আগের সরকার আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করেছিল। আমরা বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করছি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জন্যও তিনি ইমরান খানকে দায়ী করেন।