রুশ তেলে ছাড় কমেছে ৯৪ শতাংশ, দুশ্চিন্তায় ভারত

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশই। তবে তার মধ্যে থেকেও লাভ তুলে নিয়েছিল ভারত ও চীন। রাশিয়ার তেল হ্রাসকৃত মূল্যে কিনতে পেরে অনেকটাই লাভবান হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি। তবে সম্প্রতি তাদের চিন্তা বেড়েছে। কারণ যুদ্ধের ৫০০তম দিন পার করে রাশিয়া এখন তেলে ছাড় সিংহভাগই কমিয়ে দিয়েছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।

ভারত ছাড় কমে যাওয়ায় চিন্তায় ভারত 

দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার তেলের অন্যতম ক্রেতা ভারত। তবে পরিমাণের দিক দিয়ে রাশিয়ার কেনা তেল ছিল মাত্র দুই শতাংশ। কিন্তু ইউক্রেনে হামলার কারণে দায়ী করে রাশিয়ার তেল বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তাতে পোয়াবারো হয় ভারতের।

নিষেধাজ্ঞার জেরে রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশ স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে মস্কো থেকে তেল নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে রাশিয়া। তবে নিষেধাজ্ঞার ফাঁক-ফোকড় দিয়ে তেল কেনার সুযোগ করে নেয় দিল্লি। রাশিয়াও এ সুযোগ নেয়। তার ভারতের জন্য বিশেষ ছাড়ে তেল সরবরাহ করতে থাকে।

হ্রাসকৃত মূল্যে প্রচুর তেল কিনেছে

ভারতের আমদানি করা তেলের তালিকায় রাশিয়ার তেলের পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে গিয়ে দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশে। রেকর্ড পরিমাণ তেল হ্রাসকৃত মূল্যে কিনতে পারায় নিজেদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের একটি চাপ সামলাতে সফল হয় ভারত। কিন্তু সে সুযোগ এখন কমে আসছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রাশিয়ার তেল বিক্রির জন্য পশ্চিম বিশ্ব যে দাম বেঁধে দিয়েছিল, তা থেকেও ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার (৪,৯৪২ রুপি) কমে ভারতকে তেল দিচ্ছিল মস্কো। ফলে অতিরিক্ত পরিবহণ খরচ সত্ত্বেও যথেষ্ট লাভ হচ্ছিল ভারতের। গত বছরের শেষ দিকে ছাড়ের পরিমাণ কমিয়ে দেয় মস্কো। তখন ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৩০ ডলার (২,৪৭১ রুপি)। সম্প্রতি তা একেবারেই কমিয়ে এনেছে মস্কো। তারা এখন ব্যারেলপ্রতি মাত্র ৪ ডলার (৩২৯ রুপি) ছাড় দিচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় ৯৪ শতাংশ ছাড়ই কমে গেছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত পরিবহণ খরচে রুশ তেল কেনা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে ভারত।

ভারতের অর্থনীতিবিদরা এর পেছনে অবশ্য বড় দাগে দুটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। প্রথমটি হচ্ছে, ভারতের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম, ভারত পেট্রোলিয়াম, মেঙ্গালুরু রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস এবং বেসরকারি সংস্থা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি, নায়রা এনার্জি লিমিটেড- এসব কোম্পানি রুশ তেল কিনছে। কিন্তু প্রত্যেক সংস্থাই আলাদা আলাদাভাবে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে। প্রয়োজনে নানা ধরনের চুক্তি করছে। এতে দর কষাকষির ক্ষমতা কমে গেছে। এই সুযোগ ছাড়ের পরিমাণ কমে এসেছে।

দ্বিতীয়্ত, যুদ্ধ শুরুর পরপরই পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া যে ধাক্কা খেয়েছিল, এখন তার অনেকটাই সামলে উঠেছে মস্কো। এমনকি বেশ কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাদের তেলের বাণিজ্য আগের চেয়ে চাঙ্গা হয়েছে। এছাড়া গত এক বছরে নতুন নতুন বেশ কিছু ক্রেতাও পেয়েছে। তাই এ অপরিশোধিত তেলে তারা আর ছাড় দিতে রাজি নয়। ফলে হ্রাসকৃতমূল্যে আরও তেল কেনার সুযোগটা হাতছাড়া হচ্ছে ভারতের।