সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যরকম গল্প লিখছে পাঞ্জাব

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যখন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে, তখন ধর্মীয় সম্প্রীতির ভিন্ন রকম গল্প লিখছে দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশ। সেখানকার জরাজীর্ণ মসজিদগুলো খুঁজে বের করে সংস্কার করে মুসলমানদের হাতে তুলে দিচ্ছেন স্থানীয় শিখ ও হিন্দুরা। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

একটি মসজিদের সামনে মুসলমানদের সঙ্গে শিখ ও হিন্দু লোকজন

পাঞ্জাবে মুসলমানদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। আগে সেখানে প্রচুর মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। তবে দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে বেশিরভাগ মুসলমান পাকিস্তানে চলে যান। পাঞ্জাবে তখন মুসলমানরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। অনেক এলাকা একেবারে জনশূন্য হয়ে পড়ে। সেখানকার মসজিদগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। এসব মসজিদ জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। অনেক মসজিদের দেয়ালের প্লাস্টার খসে যায়। এককথায় ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে বেশিরভাগ মসজিদ।

সম্প্রতি পাঞ্জাবে মুসলমানদের সংখ্যা আবার বেড়েছে। হিমাচল প্রদেশের মুসলমানরা এখন দলে দলে পাঞ্জাবে আসছেন। স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেছেন। গুজ্জর সম্প্রদায়ের এসব মুসলমান হিমাচলের বনাঞ্চলে বসবাস করতেন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল এবং বন কর্মকর্তাদের চাপে পড়ে তারা বন ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। যাদের অনেকেই এখন পাঞ্জাবে থাকতে শুরু করেছেন।

একটি পরিত্যক্ত মসজিদ ব্যবহারোপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে

ফলে তাদের ইবাদতের জন্য মসজিদ প্রয়োজন হচ্ছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছেন সেখানকার শিখ ও হিন্দুরা। কোথাও তারা নতুন মসজিদ তৈরি করে দিচ্ছেন নিজেদের জমি দিয়ে। আবার কোথাও পুরোনা মসজিদগুলো সংস্কার করে ব্যবহারোপযোগী করে দিচ্ছেন।

মূলত যেসব শিখ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে মুসলমানদের সঙ্গে মিশেছেন, তারাই এ কাজে মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কারণ বিদেশে থাকাকালেই তারা এসব জরাজীর্ণ মসজিদগুলো সংস্কার করে মুসলমানতের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

জানা গেছে, এরইমধ্যে তারা প্রায় ১৬৫টি জরাজীর্ণ মসজিদ খুঁজে বের করে সংস্কার করে মুসলমানদের হাতে তুলে দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় অন্যান্য দায়িত্বও তুলে নিয়েছেন নিজেদের কাঁধে। এই কাজে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় গুরুদুয়ারাগুলো।

সারা দেশে যখন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, সহিংসতা চলছে, তখন মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করতে শিখ ও হিন্দুদের এ প্রচেষ্টা সাধুবাদ পাচ্ছে পুরো দেশের মানুষের।