‘বহিষ্কার অভিযান’ কি শি জিনপিংকে সমস্যায় ফেলছে

একসময় যারা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিশ্বস্ত এবং কাছের মানুষ ছিলেন, তাদেরই এখন ঠেলে দেওয়া হচ্ছে দূরে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এমন বেশকিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার হদিস না মেলায় জল্পনা চলছে, শি জিনপিং তাদের বহিষ্কার করতে শুরু করেছেন কি না; বিশেষ করে যারা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত।

শি জিনপিং

সবশেষ এই অবস্থার শিকার চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফু। কয়েক সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে তাকে দেখা যায়নি। তবে প্রথমদিকে বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে না হলেও শীর্ষ এক মার্কিন কূটনীতিক বিষয়টি তুলে ধরলে লি শাংফুকে নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়।

পরবর্তীতে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তদন্তের মুখে রয়েছেন। পিএলএ’র রকেট ফোর্সের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা এবং সামরিক আদালতের একজন বিচারককে অব্যাহতির ঘটনার পরই তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

বিবিসি লিখেছে, নতুন করে গুজব এখন ছড়াচ্ছে, সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের কিছু ক্যাডারদেরও তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এজন্য ‘স্বাস্থ্যগত কারণ’ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। যে কারণে এসব কর্মকর্তাদের ব্যাপারে জল্পনা এখন তুঙ্গে। মূল বিষয়টি হল- পিএলএ-তে দুর্নীতি ঘটনাগুলোতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

সামরিক বাহিনী উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। গত পাঁচ বছরে দুর্নীতির গোপন তথ্য দেওয়ার জন্য জনসাধারণকে আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও নতুন করে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। গত এপ্রিল থেকে তিনি পাঁচবার সামরিক ঘাঁটিসমূহ পরিদর্শন করেন।

সিসিপি ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফেলো জেমস চার বলেন, চীনে সামরিক বাহিনীতে দুর্নীতি বহুদিনের সমস্যা। ১৯৭০ এর দশকে চীন তার অর্থনীতিকে উদারীকরণের পর থেকেই এই সমস্যা রয়েছে।

প্রতি বছর চীন সামরিক খাতে এক ট্রিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি ব্যয় করে। এই বাজেটে সামরিক ক্রয় লেনদেনও হয়। তবে জাতীয় নিরাপত্তার কারণে সেসব তথ্য পুরোপুরি প্রকাশ করা হয় না। চীনে এই স্বচ্ছতার অভাব একদলীয় কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থায় আরও জটিল হয়েছে।

গবেষক চার বলেন, অন্যান্য দেশের সামরিক বাহিনী জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকলেও বিপরীতে চীনের সশস্ত্র বাহিনীকে একচেটিয়াভাবে তত্ত্বাবধান করে সিসিপি। ফলে নিষেধাজ্ঞা বাদ দিয়ে সঠিক আইনি ব্যবস্থা চালু না করা পর্যন্ত শীর্ষ কর্মকর্তাদের এই বহিষ্কার ঘটতেই থাকবে।