লোভের বশে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র, পা কেটে মিলিয়ন ডলারের বীমা দাবি!

তাইওয়ারে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতারণার মাধ্যমে বীমার প্রায় ১৭ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ১৩ কোটি টাকারও অধিক) হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় জানা যায়, ছাত্রটি নিজের পায়ের আঙ্গুলগুলো পচে যাওয়ার অজুহাতে পা কেটে ফেলে এবং বীমা দাবি করে।

ছবি - সংগৃহীত

দ্য স্ট্রেইটস টাইমস পত্রিকার খবর অনুযায়ী, তদন্তকারীরা এই প্রতারণা উন্মোচন করেছেন। প্রতারক ওই ছাত্র ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিজের পা বরফের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছিল, যাতে অঙ্গহানির মতো গুরুতর অবস্থা সৃষ্টি হয়।

তাইওয়ানের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো জানিয়েছে, চ্যাং নামের ওই ছাত্র তার সহপাঠী লিয়াও এর সঙ্গে মিলে এই প্রতারণার পরিকল্পনা করে।

প্রথমত, চ্যাং পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন বীমা কোম্পানি থেকে প্রতিবন্ধিতা, দুর্ঘটনা, স্বাস্থ্য ও ভ্রমণ বীমা নিয়েছিল।

এরপর, ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি দুই বন্ধু একসঙ্গে উত্তর তাইপের ইয়াংমিংশান, তামসুইসহ বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরে। তারা এমন একটা গল্প সাজাতে চেয়েছিল যে শীতের রাতে দীর্ঘক্ষণ মোটরসাইকেল চালানোর ফলে চ্যাংয়ের ঠান্ডায় পা পচে গেছে।

চ্যাংয়ের দাবিকে আরও বাস্তবসম্মত করার জন্য লিয়াও তাকে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে একটি বালতির মধ্যে বরফ চাপা দিয়ে রাখতে বাধ্য করে। লিয়াও চ্যাংকে একটি চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল বলে জানা যায়, যাতে সে যন্ত্রণায় কাতরালেও বরফের বালতি থেকে পা সরাতে না পারে।

এই দীর্ঘ সময়ের পর চ্যাং-এর পা ফুলে যায়। ২০২৩ সালের ২৮শে জানুয়ারি সে হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ৬ই ফেব্রুয়ারি হাঁটুর নিচ থেকে তার পা কেটে ফেলা হয়।

এরপর বীমা কোম্পানিতে দাবি জানালে চ্যাং একটি কোম্পানি থেকে প্রায় আড়াই লাখ ডলারের মতো অর্থ পেতে সক্ষম হয়।

তবে, বীমা পলিসি কেনার তারিখ এবং তার দুর্ঘটনার তারিখের মধ্যে অসঙ্গতি অন্যান্য বীমা সংস্থাগুলোকে সন্দিহান করে তোলে। কোম্পানিগুলো স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানায়।

তাইপে ডিস্ট্রিক্ট প্রসিকিউটর্স অফিসের তদন্তকারীরা আবিষ্কার করেন যে, চ্যাংয়ের ঠান্ডায় পচে যাওয়ার ক্ষতগুলো অস্বাভাবিকভাবে প্রতিসম ছিল এবং তার জুতা বা মোজার কোন ছাপ সেখানে ছিল না। আবহাওয়া সংস্থার তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি তাপমাত্রা ছিল ৬ ডিগ্রি থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। যে কারণে শীতে পচনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়।

তদন্তে তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা রেকর্ড, বীমা পলিসির নথি, আটটি মোবাইল ফোন-সহ একটি স্টায়ারোফোম বাক্স (যাতে বরফ রাখা হতো) এবং চ্যাংয়ের পা ভেজানোর জন্য ব্যবহৃত একটি সবুজ প্লাস্টিকের বালতি উদ্ধার করা হয়।

তদন্তে আরও জানা যায়, ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে লোকসানের মুখে পড়ে লিয়াও আর্থিক সমস্যায় পড়েছিল। সম্ভাব্য বিপুল পরিমাণ অর্থ লাভের লোভে সে চ্যাংকে প্ররোচিত করে এবং তাকে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি চুক্তিপত্রে সই করিয়ে নেয়। এরপরই পুরো অঙ্গচ্ছেদের পরিকল্পনাটি করা হয়।

ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো গত ১৪ই মার্চ জানিয়েছে, প্রতারণার দায়ে দুজনকেই অভিযুক্ত করা হয়। গুরুতর আঘাত করার দায়ে লিয়াওয়ের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে পাওয়া সমস্ত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।