আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ এড়ালেন অ্যাসাঞ্জ

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ব্রিটেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ আপাতত আটকে গেল। লন্ডনের হাইকোর্ট আজ মঙ্গলবার এক রায়ে প্রত্যপর্ণ স্থগিত ঘোষণা দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে তাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি করা হবে না। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত হলে ১৭৫ বছর কারাদণ্ড হতে পারে অ্যাসাঞ্জের

দীর্ঘ ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে লন্ডনে কাটাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁসকারী অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। লন্ডনে প্রথমে ইকুয়েডর দূতাবাস ও পরে ব্রিটিশ নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যে যেমন বিভিন্ন মামলার সঙ্গে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন, তেমনি তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রও অন্তত ১৮টি মামলার তদন্ত চালাচ্ছে।

৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রসিকিউটররা মূলত উইকিলিকসের মাধ্যমে গোপনীয় মার্কিন সামরিক রেকর্ড এবং কূটনৈতিক তারবার্তা প্রকাশের কারণে গুপ্তচরবৃত্তি আইনের অধীনে এসব মামলার তদন্ত করছেন। ২০১০ সালে উইকিলিকসে মার্কিন গোপন নথি প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন অ্যাসাঞ্জ।

তদন্তের শুরু থেকেই অ্যাসাঞ্জকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ব্রিটেনকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে ব্রিটেন সরকার গত বছর অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণের অনুমতি দেয়। তবে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা ইংরেজ আদালতে ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানায়।

ব্রিটিশ হাইকোর্টের দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারক অ্যাসাঞ্জকে তিনটি ভিত্তিতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন।

মঙ্গলবারের রায়ে তারা বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণকারী অ্যাসাঞ্জ যেহেতু মার্কিন নাগরিক নন, সেই হিসাবে বাকস্বাধীনতার প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার পাবেন না এবং যদিও বিদ্যমান অভিযোগগুলোর কোনোটিই মৃত্যুদণ্ড দন্ডিত হওয়ার মতো নয়।

বিচারকরা আরও বলেছেন, তবে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি করতে পারে। আর সেজন্যই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাকে হস্তান্তর করা বৈধ হবে না।

বিচারকদ্বয় বলেছেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ যদিও তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সেটি যদি আগামী তারা ১৬ এপ্রিলের মধ্যে না ঘটে, তাহলে অ্যাসাঞ্জকে আপিল করার অনুমতি দেওয়া হবে।

যদিও অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার বিরুদ্ধে মামলা সবগুলোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাতে তিনি সুষ্ঠু বিচার পাবেন না। কেননা, আইনজীবীদের দাবি, মার্কিন সিআইএ কর্মকর্তারা অ্যাসাঞ্জকে এর আগে অপহরণ বা হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল।

অ্যাসাঞ্জের আপিল বিষয়ে আগামী ২০ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ব্রিটিশ আদালত। আপাতত সে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ আটকে থাকছে অ্যাসাঞ্জের। যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া না হলেও ১৭৫ বছর কারাদণ্ড হতে পারে অ্যাসাঞ্জের।