আজ পঁচিশে বৈশাখ। বাংলা সাহিত্যের অনন্য প্রতিভা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আজ ১৬৩তম জন্মদিন। বাঙালি মানসে এখনো তিনি সমান সমুজ্জ্বল, রবির কিরণ যেন ম্লান হয়নি এতটুকু।

rabindraবিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কবির জন্ম। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা সুন্দরী দেবী দম্পতির চতুর্দশ সন্তান ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথ একাধারে কবি, কথাশিল্পী, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সংগীত রচয়িতা, সুরস্রষ্টা, গায়ক ও চিত্রশিল্পী। সাহিত্যের সব অঙ্গনেই সৃষ্টিশীলতার সমান্তরালে তিনি সমানভাবেই চালিয়ে গেছেন ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি ও সমাজভাবনা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বাঙালির নিত্যসঙ্গী। যে কোনো আড্ডায়, সভা-সমাবেশ, অনুষ্ঠান-উৎসবে কানে আসে রবীন্দ্রসংগীতের সুর। তার গান ‘ আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত হিসেবে গেয়ে ধন্য বাংলার মানুষ। আজ কবিগুরুর জন্মদিন ‘রবীন্দ্রজয়ন্তী’ নানা আয়োজনে উদ্‌যাপিত হচ্ছে দেশজুড়ে।

যদিও জন্মদিনের আড়ম্বর নিয়ে কবি নিজেই ১৩৪৩ সনে প্রবাসী পত্রিকায় লিখেছেন, ‘খ্যাতির কলরবমুখর প্রাঙ্গণে আমার জন্মদিনের যে আসন পাতা, সেখানে স্থান নিতে মন যায় না আমার। আমার প্রয়োজন আজ স্তব্ধতায় শান্তিতে।’

রবীন্দ্রভক্তদের মতে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বাংলা ও বাঙালির অহংকার। অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম দিয়ে রবীন্দ্রনাথ সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত করে গেছেন বাংলা সাহিত্যের পরিসর। অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, জীবন-সংগ্রামের প্রতিটি ক্রান্তিকালে আমাদের পাশে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। তার গান ও কবিতা আমাদের চেতনার গুরুধার।

রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্যসম্ভার দিয়ে বাংলা ভাষাকে যে ঐশ্বর্য দান করেছেন, তা বাংলা ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, ভাব-অনুভূতির প্রকাশ ও নির্মল হাস্য-কৌতুকের বাহন। আর তাইতো ১৬২ বছর পেরিয়ে আজও আমাদের মধ্যে চিরজাগরুক রবীন্দ্রনাথ।

অনেকেই মনে করেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও বিহারীলালের লেখনিতে বাংলা কবিতায় আধুনিকতার সূচনা হলেও রবীন্দ্রনাথের হাতেই সেটি পেয়েছে পূর্ণতা। একইভাবে রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে জন্ম নেওয়া বাংলা গদ্যকেও চূড়াস্পর্শী সাফল্য দান করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হিসেবে প্রথম এশীয় ও একমাত্র বাঙালি কবিই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।