'ডিটক্স' নাম শুনেই খটমট লাগছে? ভাবছেন এ আবার নতুন কি বস্তু, খায় নাকি মাথায় দেয়! নাম শুনে অনেকের অবাক হওয়ার কারণ আছে কেননা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই শব্দটি একেবারেই নতুন। এটি পশ্চিমা দেশ থেকে বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশে প্রবেশ করেছে। ওজন নিয়ন্ত্রণে ডিটক্স পানীয় বেশ উপকারি। 

detox drinks to lose weight

আপনার হাতের কাছে যা আছে তা দিয়ে আপনি দুই ধরণের ডিটক্স পানীয় তৈরি করতে পারেন। একটা সাধারণ পানিতে তৈরি করতে হয় যাকে 'ডিটক্স ওয়াটার' বা 'ইনফিউজড ওয়াটার' বলা হয়ে থাকে। আরেকটি বিশেষ পদ্ধতিতে পানি সেদ্ধ করে বানানো হয় আর তাকে বলে 'ডিটক্স টি'। 

সাধারণ ঠাণ্ডা পানিতে যে কোন ফল, সবজি বা উপকারী হারবস বড় বড় করে কেটে বেশ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখলে যে পানীয়টি তৈরি হয় তা হলো 'ডিটক্স ওয়াটার'।

এই মিশ্রণের বিশেষ দিক হলো যে এটি যেমন সুগার ও ক্যালোরি ফ্রী তেমনি ফ্লেভারেও ভরপুর। আর এই কারণেই নিয়মিত ডিটক্স ওয়াটার পান করলে আপনি পেতে পারেন মেদহীন সুন্দর সুস্বাস্থ্য ও উজ্জ্বল ত্বক। আর বেশি পরিমানে পান করলেও আপনার কোন ক্ষতি হবার আশঙ্কা নেই। অনেকের মতেই, এই সামান্য কষ্টেই আপনি খুব অল্প সময়ে উপকারটি পেতে পারেন।

আপনি কতটুকু পরিমাণ 'ডিটক্স ওয়াটার' তৈরি করবেন তা নির্ভর করবে আপনি কতটুকু পান করবেন তার উপর। চাইলে কাচের গ্লাসেও বানাতে পারেন বা জগেও বানাতে পারেন। যদি ভেবে থাকেন সারাদিনের পানির চাহিদা এই বিশেষ পানীয়টি দিয়েই পূরণ করবেন তাহলে আর দেরী কিসের? নিয়ে নিন একটি জগ বা বোতল আর এতে বানিয়ে ফেলুন এই ডিটক্স ওয়াটার।

এক্ষেত্রে যে কথাটি অবশ্যই মনে রাখবেন তা হলো কাচের বা ভাল মানের ফুডগ্রেড মেটালের জগ ও বোতল ব্যবহার করতে হবে। কেননা সস্তা মানের প্লাস্টিকের জগ বা বোতলের খারাপ প্রভাব সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আমরা অনেকেই জানি। তাই হিতে বিপরীত যেন না হয় সচেতন হয়ে উঠুন।

ডিটক্স ওয়াটার সুস্বাদু হবার কারণে এটি আপনার পানি পান বাড়িয়ে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দ্রুত বের করে দেয়। জাংকফুড প্রেমীদের জন্য সুখবর হলো এই ডিটক্স ওয়াটারের মাধ্যমে প্রচুর পানি পানের ফলে মিষ্টি ও অন্যান্য জাংকফুড জাতীয় খাবারের রুচি কমে যায়।

'ডিটক্স' বানানোর কয়েকটি রেসেপি চলুন জেনে নেই-

ডিটক্স ওয়াটার বানাতে পাত্রে আপনার চাহিদা মতো বিশুদ্ধ পানি নিয়ে তাতে নিয়ে নিন আস্ত লেবু চাকা চাকা করে কেটে তাতে এক মুঠো পুদিনাপাতা যোগ করে এবার পাত্রটি কোন ঠাণ্ডা জায়গায় বা ফ্রিজে রেখে দিন ঘণ্টা পাঁচেকের জন্য। আপনি চাইলে এতে পরিমাণ মত দারুচিনি গুঁড়ো ও পাতলা স্লাইস করা আপেল যোগ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটিতে যেহেতু পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা লাগে তাই সবচেয়ে ভাল হয় যদি রাতে ঘুমানোর আগে ভিজিয়ে তা সারারাটের জন্য রেখে দেন। আর সকাল থেকেই আপনি আপনার পানীয়টি প্রস্তুত পাবেন।

আবার পাতলা করে একটি শসা কেটে তাতে পুরো একটি লেবু চাক চাক করে কেটে যোগ করে নিন। আমের সিজনে কাঁচা বা পাকা দুই ধরনের আম দিয়েই তা করতে পারবেন। পাতলা ফালি করা আমে এক চামচ আদা কুঁচি মিশিয়ে সারারাত রেখে দিলেই তৈরি আপনার ডিটক্স ওয়াটার।

এছাড়াও আপনি আপনার পছন্দ মত যেকোন ফল যেমন: মালটা, কমলা, জাম্বুরা, তরমুজ, আঙ্গুর, স্ট্রবেরি, আনারস দিয়ে বা পছন্দের সবজি দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন। পানিতে ফল, সবজি পচে যাওয়ার ভয় এড়াতে পানীয়টি ফ্রিজে রেখে রেখে সারাদিনে আপনাকে সবটুকুই খেয়ে নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে, পরের দিনের ডিটক্স ওয়াটার বানাতে আগের দিনের পানিতে আবার পানি যোগ করলে এই পানীয়তে আপনার কোন উপকারই হবে না। তাই এই পানীয়টি বানাতে প্রতিদিনই আপনাকে নতুন পানিতে নতুন ফল যোগ করতে হবে।

আর 'ডিটক্স টি' তৈরি করতে একটি পাত্রে তিন গ্লাস পানি, এক চা চামচ আদা বাটা বা আদা কুঁচি, এক চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো বা দুই টুকরো দারুচিনি, দুইটা রসুন কোয়া নিয়ে ফুটান। পানি শুকিয়ে এক গ্লাস পরিমাণ হয়ে এলে নামিয়ে এতে একটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন।

আরেকটি পদ্ধতি হল, এক গ্লাস পানিতে তিন চা চামচ আস্ত জিরা রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে জিরাসহ পানিটা সিদ্ধ করে হাফ গ্লাস করে নিয়ে এতে একটা লেবুর রস মিশিয়ে চায়ের মতো করে পান করুন। আবার এক কাপ কুসুম গরম পানিতে এক টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়েও ডিটক্স টি তৈরি করে খেতে পারেন। ডিটক্স টি খেতে ডিটক্স ওয়াটারের মত সুস্বাদু নয় তবে বেশ উপকারি। ডিটক্স টি রাতে ঘুমানোর আগে বা সকালে খালি পেটে খেলে বেশি উপকৃত হবেন।

ডিটক্স পানীয় পানে শরীরের ফ্যাট সেল নিস্কাসনের পাশাপাশি খাবার দ্রুত হজম করে ও শারীরিক অবসাদ দূর করতে কার্যকরি ভূমিকা রাখে। ডায়েট চলাকালীন ডায়েটের পরিপূরক হিসেবে বেশ কাজে দেয় ডিটক্স পানীয়। তবে ডায়েট হিসেবে সারাদিন শুধু ডিটক্স ওয়াটার বা টি পান করলে আপনি অপুষ্টিতে পড়বেন। তাই শুধু এই পানীয়টি একমাত্র ডায়েট হিসেবে নেয়া অর্থহীন। কিন্তু পরিপুর্ণ ডায়েটের অংশ হিসেবে ডিটক্স খুবই উপকারি।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.