'কাপিং থেরাপি' এক বিস্ময়কর চিকিৎসা পদ্ধতি

মানব সভ্যতার প্রথম দিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান যখন এতটা উন্নতি করতে পারেনি, তখন বিভিন্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতির সাহায্যে চিকিৎসা চালানো হতো। যার মধ্যে প্রাচীন আকুপাংচার ও কাপিং পদ্ধতি অন্যতম। আরবিতে 'হিজামা' আর আমাদের দেশে একে ‘শিঙ্গা লাগানো’ বলা হয়ে থাকে। এই যুগেও সফলতার সঙ্গে চলছে এই চিকিৎসা পদ্ধতি। মুসলিম দেশগুলো তো বটেই আমেরিকা, জার্মানি, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। তারকা থেকে রাজনীতিবিদ এমনকি খেলোয়াড়রাও এর সুফল ভোগ করছে।

বিভিন্ন জরিপ বলছে, উন্নত দেশগুলোতে সাপ্লিমেন্টারী হিসেবে কাপিং থেরাপির কদর দিন দিন বেড়েই চলছে। সর্বপ্রথম কবে কাপিং থেরাপি চালু হয় তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সময় থেকেই হিজামা বা কাপিং থেরাপি ছিল। ঈসা (আ.) এর জন্মের সাড়ে তিন হাজার বছর আগে থেকেও এটি ছিল বলে প্রমাণ মেলে।

হাঁটুর ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে বা পিঠে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, আর্থ্যাইটিজ, বাত, ঘুমের ব্যাঘাত, থাইরয়েড ব্যাঘাত, জ্ঞান এবং স্মৃতিশক্তিহীনতা, ত্বকের বর্জ্য পরিষ্কার, অতিরিক্ত স্রাব নিঃসরণ বন্ধ করা, অর্শ, অণ্ডকোষ ফোলা, ফোঁড়া-পাঁচড়া, মাথা ব্যাথা, মাইগ্রেন, উচ্চ রক্ত চাপসহ নানা বিষক্রিয়ার প্রতিরোধক হিসেবে কাপিং পদ্ধতি ব্যবহার হয়।

আরব চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনার বিখ্যাত গ্রন্থ 'দ্যা কানুন অব মেডিসিন' সারা দুনিয়ায় টেক্সটবুক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর সেখানেও ছিল এই কাপিং থেরাপির উল্লেখ। বিভিন্ন সময় আরো চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন।

শুধু আরবরাই নয়, জাপানিজ, চাইনিজ ও গ্রীকরাও কাপিং থেরাপিতে বেশ উন্নত। তারা সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই হাসপাতালগুলোতে কাপিং থেরাপি চালু করেছে। সম্প্রতি আমাদের দেশেও আধুনিক পদ্ধতিতে কাপিং থেরাপি চালু হয়েছে। তবে গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেদে সম্প্রদায় দ্বারা শিঙ্গা লাগানোর ব্যবস্থা বহু পুরনো।

সুঁচের সাহায্যে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে নিস্তেজ প্রবাহহীন দূষিত রক্ত বের করে আনা হয়। আর এতে করে শরীরের মাংসপেশি সমূহের রক্তপ্রবাহ দ্রুততর হয়। পেশি, চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভেতরের অরগান সমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। শরীর হয় সতেজ ও শক্তিশালী। প্রাচীনকালে চিকিৎসা পদ্ধতি অতটা প্রাসার না হলেও বর্তমান স্বর্ণ যুগেও কাপিং থেরাপির আবেদন কমে যায়নি, বরং বেড়েছে।