শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের কিছু অজানা তথ্য
- Details
- by বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
এই করোনাকালে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি থাকা জেফ বেজোস, বিল গেটসকে টপকে আসনটি দখল করেছেন ইলন মাস্ক। বিশ্বখ্যাত টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী তিনি। দুনিয়ার অন্যতম এই সফল মানুষটি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নেয়া যাক একনজরে।
ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার ২০ শতাংশ শেয়ার থাকা টেসলার শেয়ার গত বছরে বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ।
তার জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেটোরিয়াতে, ১৯৭১ সালে৷ পিতা-মাতার বিচ্ছেদের কারণে হাইস্কুল শেষে মায়ের সঙ্গে কানাডায় পাড়ি দেন, সঙ্গে ছিল ভাই-বোন। এর পর দেশটির অন্টারিও’র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তবে পদার্থবিদ্যা ও অর্থনীতিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পিএইচডির জন্য দেশটির স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ দিলেও অর্থ উপার্জনের নেশায় তা হয়ে উঠেনি। বর্তমান বিশ্বে তরুণ উদ্যোক্তাদের আইকনে পরিণত হয়েছেন তিনি।
কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ থেকে মাত্র ১০ বছর বয়সে প্রোগ্রামিং এবং ১২ বছর বয়সে বেসিক প্রোগ্রামিং শেখেন ইলন মাস্ক। এই সময় ব্লাস্টার ভিডিও গেম তৈরি করে পিসি অ্যান্ড অফিস টেকনোলজি ম্যাগাজিনে বিক্রি করেন ৫০০ ডলারে।
১৯৯৫ সালে নিজের ভাইকে নিয়ে জিপ-টু সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, ১৯৯৯ সালে ২২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন সেটি। এভাবেই উদ্যোক্তার খাতায় নাম লেখানো এই তরুণ ফ্ল্যাট নেয়ার সামর্থ না থাকায় প্রথম দিকে অফিসেই ঘুমাতেন।
পরবর্তীতে লেনদেনের ডিজিটাল সার্ভিস ‘পেপ্যাল’ চালু করে ব্যাপক সাফল্য পান ইলন মাস্ক। ১৯৯৯ সালে গড়ে তোলেন এক্স.কম, পরে সেটি পেপ্যালে একত্রিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন ২০০২ সালে, যাতে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার লাভ হয় তার।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত টেসলায় ২০০৪ সালে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস হিসেবে যোগ দেন ইলন। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিটিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে সাফল্যের শীর্ষে তুলে আনেন তিনি।
হাইপারলুপ প্রযুক্তিতে আগ্রহ দেখা দিলে এর জন্য সুরঙ্গ খুঁড়তে ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেন ইলন মাস্ক। ঘণ্টায় হাজার কিলোমিটারের হাইপারলুপের প্রথম পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন তিনি।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ইলন মাস্কের, গড়ে তোলেন রকেট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। গেলো বছরের ফেব্রুয়ারিতে রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণ করে সারা বিশ্বে শোরগোল ফেলে দেন তিনি।
ডয়চে ভেলে জানায়, স্পেসএক্স থেকে রকেট উৎক্ষেপণে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হন ইলন মাস্ক, কিন্তু হাল ছাড়েননি। সেই মানুষটিই এবার সফল হয়ে ২০৫০ সাল নাগাদ মঙ্গলে একটি পূর্ণাঙ্গ শহর তৈরির পরিকল্পনা করছেন।
নিউরালিঙ্ক নামে আরো একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন ২০১৬ সালে। সেটি একটি ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেস প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। এই প্রযুক্তি কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্ক যুক্ত করবে বলে জানানো হয়।
মহাকাশে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি ইলন মাস্কের স্পেসএক্সর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
এবার আসা যাক সবচেয়ে মজার একটি বিষয়ে, তা হলো বেতন। টেসলার সিইও হিসেবে বছরে মাত্র এক ডলার বেতন নেন ইলন মাস্ক। এ ছাড়া অংশীদার থাকা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে লভ্যাংশসহ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা পান তিনি। অবশ্য, সিলিকন ভ্যালির একটা ট্রেন্ড হিসেবে বছরে ১ ডলার বেতন নেয়া হয়।
ইলন মাস্কের ‘বিতর্কিত চরিত্র’ দিয়ে শেষ করা যাক আজকের মতো। বিভিন্ন সময় নানা কারণে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে- টুইটারে নানা মন্তব্য এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের সহযোগীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ানোর মতো বিষয়। তবে সম্প্রতি করোনা নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য এবং সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে গাঁজা সেবন করেন তিনি।
সিএনবিসি জানায়, ইলন মাস্কের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। তার পরের অবস্থানে থাকা জেফ বেজোসের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সেরা ধনী ছিলেন তিনি।
ব্লুমবার্গ ও বিবিসি জানায়, গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে টেসলার শেয়ারের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। টেসলার শেয়ার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ করে বাড়ায় শীর্ষ ধনী বনে যান ইলন মাস্ক। ফলে নতুন বছরে নতুন শীর্ষ ধনীর উত্থান হলো বিশ্বে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নিজস্ব ভঙ্গিতে টুইটারে ‘কী অদ্ভুত’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
অপর এক টুইটে ইলন মাস্ক জানান, তার উপার্জিত অর্থের প্রায় অর্ধেক পৃথিবীর সমস্যা মোকাবেলায় রেখেছেন। বাকি অর্ধেক দিয়ে মঙ্গলগ্রহে একটি স্বনির্ভর শহর গড়তে ব্যয় করবেন। কোনো উল্কার আঘাতে বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে অথবা নিজেরাই পৃথিবীকে ধ্বংস করে ফেললে সব প্রাণীর জীবনযাপন অব্যাহত থাকবে সেই মঙ্গল শহরে।
গত বছর ইলন মাস্কের সম্পদ বেড়েছে ১৬০ বিলিয়ন ডলার। করোনাকালে তার টেসলার ইলেকট্রিক গাড়ির চাহিদা বাড়ায় হু হু করে বেড়েছে সম্পদের পরিমাণ। যদিও মাত্র দেড় বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কমায় বিশাল লোকসানে পড়েছিলেন মাস্ক।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে ওয়ারেন বাফেটকে পেছনে ফেলে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেছিলেন ইলন মাস্ক। পরে বিল গেটসকে হটিয়ে এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানও দখলে নেন তিনি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay ahead of the curve with the latest news and insights on technology, mobile computing, laptops, and outer space. Our team of expert writers brings you in-depth analysis of the latest trends and breakthroughs, along with hands-on reviews of the newest gadgets and devices. From the latest smartphones to the mysteries of the cosmos, we've got you covered.