যুক্তরাজ্যে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ের অনুকূল পরিবেশ নেই। দেশটির ফাইভজি (5G) অবকাঠামো থেকে কোম্পানিটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা বিষয়ক কার্যক্রম এবং চীন সরকারের সঙ্গে কোন গোপন আঁতাত রয়েছে কিনা তা তদন্তে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার কাজ করছে। যদিও হুয়াওয়ে সবসময়ই চীন সরকারের সঙ্গে কোন সম্পর্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।

huawei flagship phones

যুক্তরাজ্য হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকেই গোটা ইউরোপে কোম্পানিটির হ্যান্ডসেটের বিক্রি কমে গিয়েছে। এর প্রধাণ কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ের হ্যান্ডসেটে জিমেইল, গুগল ম্যাপ এবং প্লে স্টোরের মতো অতি প্রয়োজনীয় গুগল অ্যাপসগুলো না থাকা। যার দরুন সম্প্রতি হুয়াওয়ের সেটের প্রতি ক্রেতা আকর্ষণ কমে গিয়েছে।

এমন প্রতিকূল পরিবেশও হুয়াওয়ে টিকে আছে। শুধু তাই নয় কোম্পানিটি যুক্তরাজ্যে এখনও রীতিমতো বিনিয়োগ করে যাচ্ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক যে গবেষণা হচ্ছে সে তহবিলেরও যোগান দিচ্ছে।

এ বিষয়ে হুয়াওয়ে বলছে জনকল্যাণ করাই তাদের এ কাজের উদ্দেশ্য। যুক্তরাজ্যে সহযোগিতাপূর্ণ কাজের জন্য হুয়াওয়ে গর্ববোধ করে এবং যুক্তরাজ্যের উদ্ভাবনমূলক কাজেরও প্রশংসা করে প্রতিষ্ঠানটি।

দেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ থাকা নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনা সৃষ্টি হলেও এ নিয়ে বরাবরের মতো চুপ থেকেছে হুয়াওয়ে। সমালোচকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোম্পানিটির থেকে নগদ অর্থ নেয়া ঠিক হচ্ছে না। দেখা গিয়েছে হুয়াওয়ের থেকে সাহায্য নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক।

হুয়াওয়ে জানিয়েছে, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, সুরেই, ক্যামব্রিজ এবং সাউথাম্পটনসহ যুক্তরাজ্যের মোট ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হুয়াওয়ের ‘অংশীদারিত্ব’মূলক সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া ব্রিস্টল, ইপসউইচ এবং এডিনবার্গে কোম্পানিটির নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। গত দশ বছরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাকাজে ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে হুয়াওয়ে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এসব অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রমের বেশিরভাগই গোপনীয়তায় আচ্ছাদিত থাকে। সাংবাদিকরা প্রায়ই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার সংবাদ পান এবং শিক্ষাবিদরাও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকেন।

হুয়াওয়ে থেকে আসা এ ধরনের তহবিল প্রায়ই যুক্তরাজ্য সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে। এ বিষয়ে চায়না রিসার্চ গ্রুপের সহকারী পরিচালক টম টুজেনধাত বলেন, ‘ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক আরো স্বচ্ছ হওয়া উচিত। সহযোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরো ভালোভাবে চিন্তা করে দেখতে হবে।’

uk flag

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি হুয়াওয়ের থেকে নতুন অনুদান এবং স্পন্সরশীপ নেয়া বন্ধ করেছে ২০১৯ সালে। এখনও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা হুয়াওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এরমধ্যে সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, হুয়াওয়ের সঙ্গে ‘তাদের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব’ রয়েছে; তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা। এডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক মূলত ‘তথ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি এবং তথ্য প্রযুক্তির’ ওপর জোর দেয়া। ক্যামব্রিজের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা হয়নি।

হুয়াওয়ে জোর দিয়ে বলেছে প্রচারের অভাবের বিষয়টিতে তারা তেমন কিছু মনে করছে না। গবেষণায় গোপনীয় প্রকৃতির কারণে অপ্রকাশিত-চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি তেমন অস্বাভিক কিছু নয়। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, প্যাটেন্ট নিয়ে অনেক আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তারা মেধাসম্পদের ওপর অধিকার চায় না। বড়জোর তাদের সহযোগিতায় সম্পন্ন গবেষণাগুলোর মালিকানা নিতে পারে তারা।

হুয়াওয়ের ইউকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ঝাং বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের কারণে আমরা গর্বিত। এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’

হুয়াওয়ে এখনও যুক্তরাজ্যে কেন অবস্থান করার পেছনে তিনি তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। এগুলো হচ্ছে- লিগ্যাসি ব্রডব্যান্ড অবকাঠামোতে এখনো হুয়াওয়ের কিট রয়েছে, বিশেষ করে বিটি ও ভোডাফোনের ক্ষেত্রে বেশি। আর এসব ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের এখানে থাকা প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য তারা গর্বিত। যুক্তরাজ্যের উদ্ভাবন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে গর্ববোধ করে প্রতিষ্ঠানটি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থ, প্রযুক্তি এবং গবেষণার প্লাটফর্ম সরবরাহ করি। বিনিময়ে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা পাই।’

হুয়াওয়ে প্রত্যাশা, একসময় সব বিতর্ক মিলিয়ে যাবে এবং তারা এখানে আবার স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারবে।

সূত্র: বিবিসি

Stay ahead of the curve with the latest news and insights on technology, mobile computing, laptops, and outer space. Our team of expert writers brings you in-depth analysis of the latest trends and breakthroughs, along with hands-on reviews of the newest gadgets and devices. From the latest smartphones to the mysteries of the cosmos, we've got you covered.