ক্যান্সার হচ্ছে ঘাতক ব্যধি। অনেক রকমের ক্যান্সারের মধ্যে একটি হচ্ছে কলোরেক্টাল ক্যান্সার। কলোন ও রেক্টাল ক্যান্সারকে এক সঙ্গে কলোরেক্টাল ক্যান্সার বলে। সাধারণত কলোরেক্টাল ক্যান্সারকেই কোলন ক্যান্সার (colon-cancer) ও বাওয়েল ক্যান্সার (bowel-cancer) বলা হয়।

colon cancer

মলদ্বার, কোলন (অন্ত্রের অংশ) ও অ্যাপেন্ডিক্সে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধির কারণে কলোরেক্টাল ক্যান্সার হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কলোরেক্টাল ক্যান্সারের কোনো নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায় না। জেনেটিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মলদ্বার ও কোলনের টিউমার জিনগতভাবে মূলত একই ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টি করে। বেশীর ভাগ কলোরেক্টাল ক্যান্সার ছোট্র পলিপ থেকে শুরু হয়। পলিপ হলো এক গুচ্ছ কলোরেক্টাল নালীর আবরণী কোষের সমাহার।

ধীরে ধীরে এ পলিপ বড় হয়ে ক্যান্সারে রূপ নেয়। কিন্তু সব ধরনের পলিপ থেকে ক্যান্সার হয় না। কিছু কিছু বিষয় কলোরেক্টাল ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যেমন- পঞ্চাশ বছরের পর থেকে কলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পুরুষদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশী।

পরিবারে কোলন ও রেক্টাল ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতিমাত্রায় ধূমপান, এলকোহল, চর্বি জাতীয় খাবার বিশেষ করে গরু, খাসির মাংস বেশি খেলে, শাক-শবজি, তরকারী, ফল ইত্যাদি কম খেলে এবং ডায়াবেটিস মেলাইটাসে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও অলস জীবন যাবন এবং মুটিয়ে যাওয়া কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

সাধারণত মলাশয় এবং মলদ্বারের সংযোগস্থানে এটি হয়। কলোরেক্টাল ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ ক্রমাগত কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া বা রেক্টাল ক্রেম্পিং বা ব্লিডিং হওয়া, ক্লান্ত অনুভব করা, দুর্বল লাগা এবং ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া। কলোরেক্টাল ক্যানসারে সাধারণত অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময় পেট ভরা অথবা খুব কম খাওয়ার পরও পেট ভরা লাগে এবং অস্বস্তি অনুভব করাও কলোরেক্টাল ক্যান্সারের লক্ষণ।

এছাড়াও পেটে অস্বাভাবিক ব্যথা বা গ্যাস হওয়া, অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া, বমি হওয়া ইত্যাদিও কলোরেক্টাল ক্যান্সারের লক্ষণ। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অতি সত্বর ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরী। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসা সম্ভব। ৯০% ক্ষেত্রে কলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শুধু সার্জারির মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। পরবর্তীতে সার্জারি ও কেমোথেরাপির মাধ্যমেও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

  • কলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। গরু, খাসি, ভেড়া (লাল মাংস, চর্বি), প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চাইলে সপ্তাহে পাঁচশ গ্রামের বেশি লাল মাংস গ্রহণ যাবে না। বেশি বেশি আঁশ জাতীয় খাবার, বিভিন্ন রং এর ফল ও সবজি, শস্যদানা, ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিকেলস সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দই, দুধ, ডিম, ছোট মাছ।
  • ওজন স্বাভাবিক রাখা ও শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা বাড়াতে হবে। এলকোহল এবং ধুমপান থেকে বিরত থাকা জরুরি। মনে রাখবেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের কলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা চল্লিশ শতাংশ বেশি। তাই নিয়মিত কলোরেস্টাল স্ক্রিনিং-এ অংশ নিতে হবে। কলোন ও রেক্টামে কোন পলিপ থাকলে দ্রুত কেটে বাদ দিতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাদ্যের আঁশজাতীয় উপাদান হজমের পর উচ্ছিষ্টাংশকে নিম্নাংশে দ্রুত প্রেরণ করতে ও কোলনে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কার্সিনোজেন উপাদান তরলীকরণে বা প্রশমনে সাহায্য করে। নিয়ম মেনে জীবন যাপন করুন, সুস্থ থাকুন।


আপনি আরও পড়তে পারেন

ক্যান্সার রোধ করবে মসলা

ভয়ঙ্কর সব রোগ ছড়াচ্ছে টাকা!

ক্যান্সার সারাতে সক্ষম গ্রাভিওলা ফল

মানবদেহের ঘাতক সিলিকনযুক্ত ফ্রিজ

ত্বকের ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিরোধ

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.