আপনি পড়ছেন

এ এইচ আলমাস এবং তার দুই বন্ধু যখন ক্লাসরুমে ঢুকতে চাইলো, তখন শিক্ষক চিৎকার করে বললেন, বাইরে যাও। তাদের দোষ, তারা মাথায় হিজাব বা স্কার্ফ পরেছিল। মাথা থেকে সেটি না সরালে শিক্ষক কোনোভাবেই ক্লাসে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না।

hijab indiaক্লাসে ঢুকতে না দেয়ায় সিঁড়িতেেই পড়াশুনা করছে শিক্ষার্থীরা 

এরপর থেকে মুসলিম ছাত্রীর একটি দল নিয়মিত ক্লাসরুমের বাইরে বসতে বাধ্য হয়েছে। কারণ কলেজ প্রশাসন অভিযোগ করেছে, তারা যে হিজাব পরে এসেছে সেটি ইউনিফর্মের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং এটি খোলা না হলে তাদেরকে ক্লাসে ঢুকতে দেয়া হবে না।

ভারতের দক্ষিণে কর্ণাটক রাজ্যের উদুপি জেলার একটি সরকারি মহিলা কলেজে এই ঘটনা ঘটে। মেয়েরা কলেজ প্রশাসনকে জানিয়েছিল, হিজাব তাদের বিশ্বাসের অংশ। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তারপরও তাদের অবস্থান পাল্টায়নি। হিজাবী মেয়েরা প্রতিদিন কলেজে গেলেও গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে তাদের ক্লাসে অনুপস্থিত হিসেবে ধরা হচ্ছে।

hijabi 6 হিজাবের কারণে মুসলিম শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন

ছয়জনের ওই গ্রুপের একজন আলিয়া আসাজিদ আল জাজিরাকে বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কোনোভাবেই নড়ব না। 

হিজাব ও কলেজ ড্রেস পরিহিত শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের বাইরে সিঁড়িতে বসে থাকা একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। এর প্রেক্ষিতে কলেজ প্রশাসন আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেছে একটি আবেদন লিখতে, যেখানে বলা হয়েছে, বাড়িতে থাকায় তারা ক্লাস মিস করেছে।

মুসকান জয়নব নামের অন্য এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা তাদের এই প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা আমাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, এটি আমাদের ক্যারিয়ার নষ্ট করবে।

ছাত্রীরা জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের এই আচরণ তাদের অপমান ও বৈষম্যের মুখে ফেলেছে। তারা বলেন, সারাদিন ক্লাসের বাইরে থাকাটা সুখকর কিছু নয়। আমাদের শিক্ষক ও সহপাঠী শিক্ষার্থীরা আমাদের ঠাট্টা করে। তারা আমাদের জিজ্ঞেস করে, হিজাব খুলে ফেললে আমাদের সমস্যা কী?

এ ধরনের মানসিক নির্যাতনের কারণে আমার এক বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কারণ এমনিতেই তারা বার্ষিক পরীক্ষায় বসার জন্য প্রয়োজনীয় উপস্থিতির শতাংশ নিয়ে চিন্তিত। তারওপর এমন আচরণে তারা ভীষণ মর্মাহত।

কলেজের অধ্যক্ষ রুদ্র গৌদা বলেন, তারা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে হিজাব পরতে দিতে পারবেন না কারণ এটি ইউনিফর্মের অংশ নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনাই তারা মানছেন।

ওই কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী আথিয়া বলেন, হিজাব পরার জন্য আমরা অনেক অপমানের সম্মুখীন হয়েছি। এর আগেও একজন শিক্ষক হিজাব পরিহিত ছাত্রীকে ক্লাসের মাঝখানে মেঝেতে বসিয়ে তার হিজাব খুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে, তারা আমাদের ক্লাসরুমে বসার অনুমতি দিয়েছিল।

হিজাবে এমন নিষেধাজ্ঞা ভারতে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ছাত্র এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো কলেজ প্রশাসনকে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছে।

ফ্রাটারনিটি মুভমেন্ট আন্দোলনের সেক্রেটারি আফরিন ফাতিমা বলেন, আমরা সম্পূর্ণ সংহতি ও সমর্থন নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা দাবি করছি, প্রশাসনে যারা মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরতে বাধা দিচ্ছেন তাদের বরখাস্ত করা হোক এবং এই মেয়েদেরকে তাদের আত্মসম্মান ও মর্যাদা নিয়ে ক্লাসরুমে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। শিক্ষকরা যা করছেন, এটা ইসলামফোবিয়া ও বর্ণবাদ।

একটি স্থানীয় আইনজীবী সমিতি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানির জন্য কলেজ প্রশাসন এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা চিঠিতে লিখেছে, তরুণ মুসলিম শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও তাদের বিশ্বাসের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করা একটি মানবাধিকার সমস্যা এবং এটিকে অবশ্যই সেভাবে বিবেচনা করা উচিত।

দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে সক্রিয় মুসলিম ছাত্রদের একটি সংগঠন ‘দ্য ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিএফআই) কলেজকে হিজাবের ওপর তার নিয়মগুলো প্রত্যাহার করার এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার সময় এটি পরার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এখন পর্যন্ত এসব প্রতিবাদে কোনো ফল আসেনি। তবে প্রতিবাদকারীরা জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে কলেজ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.