রাজউকের ডিডি সেজে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকায় পূর্বাচলে প্লট বিক্রয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলে সনু মিয়া চক্র। ওই বিজ্ঞপ্তি দেখে আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যাক্তি তাদের দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করেন। তখন এরশাদ নামের একজন ফোন রিসিভ করে জানায় রাজউকের ডিডি হাবীবুর রহমানের নামে (আসলে ইনি সনু মিয়া) পূর্বাচল সেক্টরে দুটি প্লট আছে। তার নিকট থেকে এওয়ার্ড কিনে প্লট বানাতে চাইলে প্রতি প্লটে ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত ঘুষ দিতে হবে।

সনু মিয়া

এরপর ভুক্তভোগী আখতারুজ্জামান কথিত হাবীবুর রহমানের সাথে কথা বলেন। হাবীবুর রহমান ওরফে সনু মিয়া তাকে বলেন, প্রথমে এওয়ার্ড ক্রয় করতে হবে, যার মূল্য ৫ লক্ষ টাকা এবং পরে রাজউকে আরও ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে তদবির করে প্লট বানাতে হবে।

আখতারুজ্জামান এসব কথা শোনার পর রাজউকের অফিসে যান এবং সেখানে নেমপ্লেটে ডিডি হাবীবুর রহমান হাবীব লেখা দেখে আশ্বস্ত হন। পরবর্তীতে আখতারুজ্জামান নিজেই এরশাদসহ ডিডি হাবীবুর রহমান ওরফে সনু মিয়ার কাছে ১০টি এওয়ার্ড ১৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বায়না করেন।

পরবর্তীতে পূর্বাচলে আরও কিছু প্লটসহ মোট ২৪টি এওয়ার্ডের প্লট ক্রয় করে দেওয়ার জন্য সবমিলিয়ে দেড় কোটি টাকা দাবি করে সনু মিয়া চক্র। এরই প্রেক্ষিতে কথিত ডিডি হাবীবের মাধ্যমে আরও ১৪টি এওয়ার্ড ৩১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বায়না করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে আখতারুজ্জামান নগদ এক কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা তাদের প্রদান করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, এসব কাজে কাগজপত্র তৈরিতে জয়নাল আবেদিনসহ অজ্ঞাতনামা আরও একজন সহযোগিতা করেছে।

ডিডি হাবিবুর রহমান ওরফে সনু মিয়া আখতারুজ্জামানকে ২-৩ মাসের মধ্যে প্লটের অনলাইন কোড পাবেন বলে জানায়। পরবর্তীতে ৫ মাস পর আখতারুজ্জামানকে ২৪টি প্লটের বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক বাদী অনলাইন কোড পাওয়ার পর রাজউকে গিয়ে ২৪টি প্লটের অনলাইন কোড যাচাই করেন। দেখা যায়, সেখানে ২৪টি প্লটের কোনো কোড নম্বরই নেই, সবগুলোই ভুয়া ও জাল।

ডিডি হাবীব জালিয়াতি করেছে বুঝতে পেরে বিষয়টি সিআইডি কর্মকর্তাদের অবহিত করেন আখতারুজ্জামান এবং আসামিদের প্রদানকৃত টাকার ডকুমেন্টসসহ সকল কাগজপত্র উপস্থাপন করেন।

আখতারুজ্জামান কর্তৃক উপস্থাপনকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গতকাল আসামি তৈয়বুর রহমান সনু ওরফে সনুকে (ভুয়া ডিডি হাবিবুর রহমান) তার বর্তমান ঠিকানা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তসর বয়স ৫৮ বছর। এই সনু মিয়া একই পন্থায় আরও বিভিন্ন গ্রাহকের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করেছে বলেও তথ্য পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে সিআইডি ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন বলেন, সনু মিয়া নিজেকে রাজউকের ডিডি পরিচয় দিয়ে পূর্বাচলস্থ প্লট বরাদ্দের কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিত। এ ঘটনার ভুক্তভোগী মো. আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় মামলা দায়ের করেছেন। যার প্রেক্ষিতে সনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।