পঞ্চগড়ে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা

চার দিনের টানা ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে, বাড়িঘর, আবাদী কৃষি জমিসহ অনেক গ্রাম। অনেকেই বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং খোলা মাঠে আশ্রয় নিয়ে কোনরকমে জীবনরক্ষা করছেন।

জেলা প্রশাসন বলছে, পঞ্চগড়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে রোববার দুপুর থেকে বৃষ্টি থেমেছে। সরকারি হিসাবে পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার ৪৫ হাজার ৩০৫টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৩০ হাজার পরিবার। আজ সন্ধ্যায় অবশ্য করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেলপথ। এজন্য পঞ্চগড়-দিনাজপুর-পার্বতীপুর ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।

অনাকাঙ্ক্ষিত এই বন্যায় জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেছে। পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার নিমনগর, ডিষ্টিলারিজ খালপাড়া, পুরানা ক্যাম্প, রামের ডাঙ্গা, পৌর খালপাড়া, রাজনগর খালপাড়াসহ বিভিন্ন মহল্লার তিন হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে চলাচলের রাস্তা। পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষজন। প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।

বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে দেবীগঞ্জ উপজেলায়। ভারী বর্ষণ আর ভারতের পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে ১০০টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। দেবীগঞ্জের বুক চিরে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে দেবীগঞ্জ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে। ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে করতোয়ার দুকূল। দেবীগঞ্জকে যেহেতু বন্যামুক্ত অঞ্চল বলে অভিহীত করা হয় তাই বন্যা মোকাবেলায় সাধারণ মানুষের কোন পূর্ব প্রস্তুতি এবং অভিজ্ঞতা নেই। ফলে অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছেন দেবীগঞ্জবাসী।

প্লাবিত হয়েছে বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদী সংলগ্ন বেংহারি বনগ্রাম, কাজল দিঘী কালীগঞ্জ, মাড়েয়া বামন হাট, শালডাঙ্গা, পামুলী, দেবীডুবা, সুন্দর দিঘী, চেংঠি হাজরাডাঙ্গা, সোনাহার, বড় শশী, টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নসহ দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের করতোয়া নদী সংলগ্ন শত শত গ্রাম।

তেঁতুলিয়ার ভজনপুর ইউনিয়ন করতোয়া নদীর পানি বেড়ে ভজনপুর বাজার, ভেলুপাডা, ডাঙ্গী, গোলাপদীগছ, গনাগছ, শিপাহি পাড়া, ভদ্রেশর, শান্তিনগর, কির্তন পাড়া গ্রাম, দেবনগড় ইউনিয়নের কলেজপাড়া, বালুবাড়ির, সিবচন্ড, কালিয়ামনি, ঝালেংঙ্গি, ধানসুকা, নিজ বাড়ী, পাথর ঘাটা, আঠোর খারী, শেক গছ, ময়না গুড়ী গ্রাম, তেঁতুলিয়ার সরদার পাড়া, রনচন্ডি, খয়খাট পাড়া, কাশেম গঞ্জ, বাংলাবান্ধায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত। পাশাপাশি পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারীর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ইউনিয়নের মানুষ বন্যার পানিতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম জোনের বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেট দিয়ে পানি অপসারিত না হওয়ায় পঞ্চগড় এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য সাময়িকভাবে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, চার দিনের ভারি বর্ষণে দেবীগঞ্জের ১০ ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত বিভিন্ন এলাকায় শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই বন্যার্তদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন।