আপনি পড়ছেন

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। কখনও কখনও অভিভাবকরাও ছুটছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এত ভ্রমণ, যাত্রাপথে যানজট, থাকা-খাওয়ার কষ্টসহ হাজারও প্রতিকূলতায় জর্জরিত উচ্চশিক্ষা গ্রহণের রাস্তা। ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা হয়রান। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়িমসিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সমন্বিত পরীক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে ২য় পর্ব। লিখেছেন- যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ

hons admission test 3

ভর্তিচ্ছুদের থাকা-খাওয়ার চরম কষ্ট: বিভিন্ন ভর্তিচ্ছুদের ভোগান্তিটা নিজ চোখে না দেখলে বোঝা কঠিন। দেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন প্রতি ভর্তিযুদ্ধে নামেন কমপক্ষে পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থী। কিছু কিছু ইউনিট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা একশ’ পেরিয়ে যায়। সংখ্যা দেখেই বোঝা যায় ভর্তি পরীক্ষার সময় ক্যাম্পাসে কী পরিমাণ ভিড় হয়। ভর্তিচ্ছু অধিকাংশ শিক্ষার্থীর নেই কোনো আবাসন ব্যবস্থা, নেই খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আশ্রয় নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে। একই রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয় তাদের। মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা আরও প্রকট। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার রয়েছে 'র‍্যাগ'-এর নোংরা সংস্কৃতি। ফলে অনেকেই হন নানা হয়রানির শিকার।

আরিফ নামের ঢাকার এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রাস্তায় জ্যামের কথা চিন্তা করে পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যার আগেই চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেই। জ্যাম একটু কম থাকায় ভোরেই পৌঁছে যাই চট্টগ্রামে। থাকার জায়গা না থাকায় সরাসরি যাই বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে; কিন্তু সেখানে দেখি তালা লাগানো। ঠিক ৮টার দিকে মসজিদের গেট খুলে দেয়া হয়। ততক্ষণ মসজিদের সিঁড়িতেই বসেছিলাম। এরপর মসজিদ খুলে দিলে ভেতরে একটু রেস্ট নেই। মসজিদের বাথরুমেই প্রস্রাব-পায়খানার কাজ সেরেছি।’

জিনিস পত্রের দাম বেশি, সাহায্যের নামে চাঁদা আদায়: শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভর্তির মৌসুমে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনিসপত্রের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রিকশাচালক থেকে শুরু করে সিএনজি অটোরিকশাচালক সবাই বাড়তি ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করেন। নিম্নমানের খাবার দিয়ে ইচ্ছেমতো উচ্চমূল্য আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়া রিভা ও শাকিল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসার সময় রিকশাচালক আমাদের কাছে বেশি ভাড়া নিয়েছেন। এরপর পরীক্ষা শেষে ক্যাম্পাসে বিরিয়ানির কথা বলে দু’জনের কাছে থেকে ১৫০ টাকা নেয়া হয়েছে। পরে প্যাকেট খুলে দেখি খাবারে কোনো মাংস নেই। এরকম অসংখ্য তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সিয়ামের বোন সিমু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, 'এখানে সবকিছুতেই টাকা চাই, টাকা চাই একটা অবস্থা। রিকশাওয়ালা বেশি ভাড়া নিয়েছেন। গত দিন আমার ভাই ও কাজিন সিফা পরীক্ষা দিতে এসেছিল। পরীক্ষায় নিয়ম সঙ্গে ব্যাগ রাখা যাবে না। এজন্য ভলেন্টিয়াররা ছিলেন কড়াকড়ি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খোলা বুথে ব্যাগ আর মোবাইল ২০০ টাকা দিয়ে জমা রাখতে হয়েছে। অভিভাবক ছাড়া পরীক্ষা দিতে আসা সকলকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগ-মোবাইল রাখতে বাধ্য করা হয়েছে।'

সিমু বলেন, 'পরের দিন অন্য ইউনিটের পরীক্ষায় আমি নিজেই এসেছি। পরীক্ষা চলাকালীন বাইরে যতক্ষণ ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি গ্রুপ এসেছে বিভিন্ন সাহায্যের জন্য টাকা আদায় করতে। তারা বলছেন, কারও সহপাঠী অসুস্থ, কারো সহপাঠীর মা অসুস্থ আবার কেউ কেউ এসছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নাম করে চাঁদা নিতে। একজন অভিভাবক বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসেছে চাঁদা নিতে, তাদের ফেরাতে পারিনি। ৫ থেকে ৬টি গ্রুপকে কমপক্ষে ১০০ টাকা দিতে হয়েছে।'

যানজটের কারণে পরীক্ষায় বিলম্ব: কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকলে ওই রুটে ভর্তিচ্ছু হাজারও শিক্ষার্থী ছোটাছুটি বেড়ে যায়। উপচেপড়া ভিড় থাকে বাস এবং ট্রেনে। ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছালেও বাসগুলো অনেক সময় পারে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়মুখী ট্রেনগুলোতেও থাকে অনেক ভিড়। ট্রেনে দুই ভাইবোনকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে রাজশাহী নিয়ে যান বড় ভাই জাহাঙ্গীর।

তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'গাড়িতে টিকিট পাইনি। ফলে ট্রেনে বাধ্য হয়ে রওনা দিতে হয়েছে। কিন্তু ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় ছিল। বোনকে কোনো মতে ট্রেনের ভেতরে একটা টুলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। আর সঙ্গে থাকা ভর্তিচ্ছু আরেক ভাইকে নিয়ে কোনো মতে দাঁড়িয়ে বসে কষ্ট করে রাজশাহী যেতে হয়েছে। ভিড়ের কারণে ট্রেনের বাথরুমেও যাওয়ার সুযোগ হয়নি।'

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, যারা বাসে এসেছেন তাদের অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। পরীক্ষায় অংশ না নিতে পারা রাহিলা জানান, বাস ছিল রাত ৮টায়; কিন্তু জ্যামের কারণে বাস ছেড়েছে রাত ২টায়। রাস্তাতেও ছিল প্রচণ্ড জ্যাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি বেলা ১১টায়। ফলে একটা ইউনিটের পরীক্ষা মিস হয়েছে। একই অবস্থা চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও। ফলে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য সময় দেয়া ছিল সকাল ১০টা; কিন্তু সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে সাড়ে এগারোটায়। ফলে যারা ১০টায় পরীক্ষা ভেবে ৯টায় প্রবেশ করেছেন তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে আড়াই ঘণ্টা। আবার যারা জ্যামের কারণে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দেরি করে ফেলেছেন তাদের অভিজ্ঞতাও ভিন্নরকম। দেখা গেছে, সাড়ে দশটায় হন্তদন্ত হয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকলেন; কিন্তু পরীক্ষা শুরু হলো আরো একঘণ্টা পর।

hons admission test 4

সমন্বিত ভর্কি পরীক্ষায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়িমসি: সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা থাকা ফলেও বাস্তবায়ন হয়নি সমন্বিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার। ফলে শিক্ষার্থীদের ছুটতে হচ্ছে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে থাকলেও বিপক্ষে রয়েছে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

এক মাস ধরে চলছে দেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা আলাদা নিয়মে এ পরীক্ষা চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া না করে আর্থিক ক্ষতি ও শত দুর্ভোগ মেনে নিয়েই ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বরেণ্য শিক্ষাবিদ এবং সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দীর্ঘদিন থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে কথা বলে আসছেন। তিনি বলেন, 'দেশে বর্তমানে ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সব বিশ্ববিদ্যালয় যদি ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি করে ছুটির দিন নিতে চাইলে ৪২টি উইকঅ্যান্ড দরকার। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হওয়ার মাঝখানে ৪২টি ছুটির দিন নেই। আর দেশের প্রতাপশালী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক উইকঅ্যান্ড পরীক্ষা শেষ করে না। তাদের কয়েকটি ছুটির দিন দরকার। তাদের পছন্দের দিনগুলো বেছে নেয়ার পর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাকি ছুটির দিনগুলো ভাগাভাগি করে নেয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে প্রতিটি বিভাগ আলাদা করে নিজের বিভাগের পরীক্ষা নিয়ে থাকে। ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলে ছেলে-মেয়েদের গাঁট্টি-বস্তা নিয়ে দিনের পর দিন থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের নানারকম কষ্টের কথা নাইবা বললাম। আমি সবসময় বলে আসছি যদি সব বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয় তাহলে এ ধরনের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে। সকলে উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম হবে। ’

[চলবে...]

১ম পর্ব: আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা, শিক্ষার্থী-অভিভাবক হয়রান

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.