জাতীয় সংসদ ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’: সংসদে তোলপাড়

জাতীয় সংসদকে ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’ বলে আখ্যায়িত করায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-কে সংসদে তলব করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জাতীয় সংসদ নিয়ে করা অতীতের সকল মন্তব্য প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে আর কোনোদিন সংবিধান ও পার্লামেন্ট নিয়ে কথা না বলার অঙ্গীকার করতে বলেছেন। এর অন্যথা হলে তিনি সংস্থাটিকে সাসপেন্ড করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।

সোমবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। তিনি টিআইবির সমালোচনা করে বলেন, তারা কেন নতুন নির্বাচন দাবি করছে। যখন নির্বাচন বানচালের জন্য মানুষ হত্যা করা হয়েছে, তখন তো কথা বলেনি। তখন কেন মৌনব্রত পালন করেছিলেন? নতুন নির্বাচনের দাবি কি তাদের এখতিয়ারভুক্ত? তারা সংবিধানসম্মত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এটা কী তাদের এখতিয়ারে পড়ে।

নবম সংসদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নবম সংসদ পর্যন্ত আমরা দেখতে পাই বিরোধী দল সংসদে ফাইল ছোড়াছুড়ি, গালিগালাজ… নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় মন্তব্য এমনকি প্রয়াত নেতাদের নিয়ে তারা কথা বলতে ছাড়েননি। কিন্তু আমরা বিরোধী দল হিসেবে গঠনমূলক কথা বলছি। জনগণের সমস্যার কথা তুলে ধরছি। সেখানে আমাদের কথিত বিরোধী দল হিসেবে আখ্যায়িত করা কতটা সমীচীন হয়েছে সেটা আমার প্রশ্ন।

এরপর অনির্ধারিত এই আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল যোগ দেন। তিনি বলেন, যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করছেন, তখন টিআইবি এসব বলছে। এদের সংসদের প্রিভিলেজ কমিটিতে (বিশেষ অধিকার) সমন করে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। কত টাকা, কীভাবে পাচ্ছে, কোথায় খরচ করছে, তার জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি টিআইবির বক্তব্যে সংসদের মর্যাদাহানি ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, আপনারা কী কখনও টিআইবির মুখ থেকে বাংলাদেশের প্রশংসা শুনেছেন? বেগম খালেদা জিয়া যখন দেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন, তখন কি টিআইবি কোনো কথা বলেছিল? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার যখন চেষ্টা করেছিল, তখনও তারা কোনো কথা বলেনি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানকে ‘অশিক্ষিত ডক্টরেট’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আইন বুঝবেন না, পার্লামেন্ট বুঝবেন না, না বুইঝা কীভাবে ডক্টরেট হইলেন? আপনারা পার্লামেন্টকে পুতুল নাচের রঙ্গমঞ্চ বললেন, অথচ এই পার্লামেন্টে কমিটিতে আপনারা কথা বলে গেছেন। তাহলে পুতুল নাচের রঙ্গমঞ্চে আপনারা বাঁদর নাচ নেচেছেন?

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, এই সংসদ থেকে আমি তাকে (ইফতেখারুজ্জামান) আবারও তিন দিনের সময় দিতে চাই। অবিলম্বে তিনি ক্ষমা চাইবেন। জীবনেও কোনোদিন সংবিধান এবং পার্লামেন্ট সম্পর্কে কথা বলবেন না-এই অঙ্গীকার করলেই কেবল আমরা মেনে নেব। অন্যথায় এই যে ফরেন ডোনেশন অ্যাক্টের যে এমেনমেন্ডটা আমার কমিটিতে রয়েছে, ওখানে আমি স্পষ্ট লিখে দেব। যদিও বাংলাদেশ এনজিওবান্ধব দেশ। এনজিওবান্ধব অর্থ এই না, কথায় কথায় পার্লামেন্টকে, সংবিধানকে অবজ্ঞা করবেন, লঙ্ঘন করবেন। জনগণকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবেন। আর আপনি এই দেশের সংবিধিবদ্ধ এনজিও দাবি করবেন। সংবিধানকে লঙ্ঘন করে, পার্লামেন্টকে অবজ্ঞা করে যদি কেউ কথা বলে তাহলে সেই এনজিও এবং টিআইবিকেও রাখা হবে না। এটা কর্তৃত্বহীন হয়ে যাবে। এই ক্ষমতা এই সংসদের আছে। সুতরাং লেখাপড়া যদি করেন তাহলে একটু বইপত্র দেখে করেন। কথায় কথায় পার্লামেন্টকে, সংবিধানকে অবজ্ঞা করা পৃথিবীর কোনো দেশে নাই।

সংবিধান লংঘন রাষ্ট্রদ্রোহের সমান অপরাধ জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, আপনি সংবিধান মানবেন না, পার্লামেন্ট মানবেন না, তা তো হবে না। এই সংসদের সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। ক্ষমতার সকল উৎস জনগণ। সেই জনগণ নিয়ে কথা বলে আপনা সংবিধান লংঘন করেছেন। সংবিধান লংঘনের অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ।

তিন দিনের মধ্যে টিআইবিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, তিন দিনের মধ্যে অবনত মস্তকে ক্ষমা চান। সংবিধান মানেন, পার্লামেন্ট মানে, না হয় ফরেন ডোনেশন অ্যাক্টে...। ওই আইনে যদি আপনাদের বরখাস্ত করা হয়, তবে আমার কেন, আমাদের নেত্রীও কিছু করার থাকবে না।

এছাড়া এই প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জাসদ নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর টিআইবি ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ নামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে সময় সংস্থাটির পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান সংসদ ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের ভুবনে পরিণত হয়েছে। সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রাতিষ্ঠানিক ফোরামে পরিণত হয়েছে। এসময় তিনি সংসদকে ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’ বলে অভিহিত করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

প্রধানমন্ত্রী: ‘সাময়িক’ কড়াকড়ি আসতে পারে কয়েকটি অ্যাপসে

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমলো

বাংলাদেশ থেকে বিমানের জ্বালানি নেবে নেপাল