কেমন ছিলো ১৬ ডিসেম্বরের সেই বিকালটি?

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল। বৃহস্পতিবার। বিকাল ৪টা বেজে ১৯ মিনিট। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম-কমান্ডের অধিনায়ক লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। আরও আছেন বাংলাদেশের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার। আর সাথে আছে মুক্তিপ্রিয় হাজারো জনতা। উৎফুল্ল, উদ্বেলিত। আনন্দে পাগল প্রায়।

অপরদিকে আছেন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক লেঃ জেঃ এ এ কে নিয়াজী। সাথে পরাজয়ের গ্লানিতে আচ্ছন্ন লক্ষ প্রায় সৈনিক।

এর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পদ্ধতি নিয়ে আলাপ হয় মিত্রবাহিনীর মাঝে। ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব বললেন, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে রেসকোর্স ময়দানে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রথমে জেনারেল অরোরাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। তারপর জেনারেল নিয়াজি তার অস্ত্র ও পদবির ব্যাজ জেনারেল অরোরার কাছে হস্তান্তর করবেন।

তবে এই শর্তে একটু অদল-বদল আনেন জেনারেল নিয়াজি। তিনি জানানলেন, আত্মসমর্পণের পর তাঁদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র সাথে রাখা প্রয়োজন। মেজর জেনারেল জ্যাকব নিয়াজির এই দাবি মেনে নিলেন। ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পনের পরও অস্ত্র থেকে যায় পাকিস্তান বাহিনীর কাছে। ১৯ ডিসেম্বর দুপুর ১১টায়, কুর্মিটোলা গলফ গ্রাউন্ডে পরবর্তীতে তারা অস্ত্র সমর্পণ করে।

বাংলাদেশ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী হানাদার মুক্ত এলাকা পরিদর্শনে ঢাকার বাইরে ছিলেন। এমতাবস্থায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করার নির্দেশ দিলেন। ঢাকার বিমানবন্দরের রানওয়ে বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ছিলো। এ কে খন্দকার জেনারেল অরোরা এবং তাঁর স্ত্রী মিসেস বান্তি অরোরার সাথে দমদম বিমানবন্দর আগরতলায় গিয়ে পৌছান। এরপর সেখান থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন সবাই।

আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে লেফট্যান্ট জেনারেল নিয়াজি মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতা তখন আনন্দে উদ্বেলিত। আর ৯৩ হাজার পাকসেনা তখন মাটির দিকে তাকিয়ে। বলা হয়, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর আত্মোসমর্পনের দিক থেকে এটাই সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। এই দিনকে স্মরণ করে জেনারেল নিয়াজি তাঁর 'দ্যা বিট্রেয়াল অব ইষ্ট পাকিস্তান' গ্রন্থে লিখেন,

"১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। মেজর জেনারেল ফরমান ও এডমিরাল শরীফ এ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। আমি কম্পিত হাতে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করি। তখন আমার অন্তর উত্থিত ঢেউ দু'চোখ বেয়ে অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ে।"

আপনি আরও পড়তে পারেন

১৬ই ডিসেম্বর, বিজয়ের চেতনায় আরো একটি বছর