ঢাকা থেকে কী রিকশা সরানো সম্ভব?
- Details
- by ইউএনবি
ঢাকায় যান চলাচলের গতি ধীর করে দেয়ার জন্য মূলত রিকশাকে দোষারোপ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার অভাবে রাজধানী থেকে এ তিন চাকার যানটি অপসারণ করতে পারছে না। এমনটি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলছেন, বিগত বছরগুলোতে রিকশাকে কেন্দ্র করে যে বিশাল অবৈধ ব্যবসা গড়ে উঠেছে তাও মন্থর গতিতে চলা এ যান রাজধানী থেকে তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা।
ঢাকায় রিকশা
তাদের মতে, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো রিকশামুক্ত করতে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি প্রয়োজন ফ্র্যাঞ্চাইজি কোম্পানির অধীনে পর্যাপ্ত আধুনিক বাসের ব্যবস্থা এবং কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক, নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এবং ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক পরিকল্পিত উপায়ে গুলশান, বনানী ও বারিধারার মূল সড়কগুলো রিকশামুক্ত করার যে সফল উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন তা সরকার অনুসরণ করতে পারে।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) ১৯৮২ সালে ৭৯ হাজার ৫৫৪টি রিকশার লাইসেন্স দেয়। তারপর থেকে নগর কর্তৃপক্ষ সেগুলো নবায়ন করেছে কিন্তু নতুন করে আর লাইসেন্স দেয়নি। কিন্তু নজরদারির অভাব ও আইনের দুর্বল প্রয়োগের ফলে অননুমোদিত রিকশার সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক হারে বাড়ছে।
দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাজধানীতে প্রায় ১১ লাখ রিকশা রয়েছে।
অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, যথাযথ পরিকল্পনা ও আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ধাপে ধাপে সব প্রধান সড়ক থেকে রিকশা অবশ্যই সরিয়ে ফেলতে হবে। ‘রিকশা শুধু মোটরযানের গতিই কমিয়ে দিচ্ছে না, সেই সাথে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।’
তিনি বলেন, নগরীর প্রধান সড়কে মোটরযানের গড় গতি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। কিন্তু রিকশার এলোমেলো চলাচলের জন্য ওই গাড়িগুলোকে ঘণ্টায় ৬-৭ কিলোমিটার গতিতে চলতে হয়।
ঢাকায় রিকশা
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় রিকশার সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে বলে জানান অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা চালু করে পাবলিক বাসের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। ‘সরকার প্রথমে বাস ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা চালু এবং তার পরে ধাপে ধাপে প্রধান সড়কগুলো থেকে রিকশা অপসারণ করতে পারে।’
এ পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, রিকশা অপসারণে যখনই কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় তখনই ক্ষমতাসীন দলের মদদ থাকা সংগঠনগুলো বাধার সৃষ্টি করে। কারণ এগুলো লাইসেন্স ও রুট পারমিট দেয়া, নতুন রিকশা বানানো ও গ্যারেজ বসানোর অবৈধ ব্যবসা করছে এবং বিপুল অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে। তারাই রিকশা সরানোর উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিতে আন্দোলনে নামে ও সমস্যা সৃষ্টি করে।
‘এমন সমস্যা দূর করতে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। এমনকি, কলকাতায় শ্রমিকবান্ধব বাম সরকারই ১৯৯৮ সালে প্রধান সড়কগুলো থেকে রিকশা তুলে দেয়। মোটরযানগুলোকে যৌক্তিক গতিতে চলাচল করতে দেয়ার জন্য প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা নিষিদ্ধ না করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই,’ যোগ করেন তিনি।
ইকবাল হাবিব বলেন, ‘পর্যাপ্ত গণপরিবহন না থাকায় আমরা এখনই রাজধানী থেকে রিকশা পুরোপুরি তুলে দেয়ার মতো অবস্থায় নেই। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে ঢাকা থেকে রিকশা সরাতে পারব না।’
তিনি জানান, নগরী থেকে ধাপে ধাপে রিকশা সরাতে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা ও আন্তরিক উদ্যোগ প্রয়োজন। ‘আমরা এলাকা ভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নগরীর প্রধান সড়কগুলো থেকে রিকশা দূর করতে পারি।’
‘২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার পর তৎকালীন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক ভাই গুলশান, বনানী ও বারিধারার প্রধান সড়কগুলো থেকে রিকশা অপসারণের উদ্যোগ নেন। তিনি গণপরিবহন সংকট সমাধানে ‘ঢাকা চাকা’ এবং পরে প্রধান সড়কগুলো রিকশামুক্ত রাখতে পৃথক এলাকা ব্যবস্থা চালু করেন। তিনি প্রতিটি এলাকার ভেতরের সড়কের জন্য একক রঙের নির্দিষ্ট সংখ্যক বৈধ রিকশা ঠিক করে দেন। যার ফলে কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই প্রধান সকড়গুলো থেকে এ তিন চাকার যান সরে যায়। তাই রিকশা সরাতে এমন সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ দরকার,’ বলেন ইকবাল হাবিব।
তিনি বলেন, নগর কর্তৃপক্ষ কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই খেয়ালখুশি মতো কিছু প্রধান সড়কে রিকশা নিষিদ্ধ করে এবং শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়। ‘নতুন রিকশা বানানো রোধে সরকারের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে এবং অবৈধগুলো ধীরে ধীরে সরিয়ে নিতে হবে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, উপযুক্ত বিকল্প ছাড়া রাজধানী থেকে রিকশা পুরোপুরি সরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাসের মতো গণপরিবহন এবং অটোরিকশা ও ট্যাক্সির সাথে কমিউটার ট্রেন সেবা রিকশার বিকল্প হতে পারে। ‘রিকশার ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা হ্রাসে মেট্রো রেল খুব উপকারী হবে। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর সেবা, বিশেষ করে মোটরবাইকও রিকশার এক বিকল্প। কিন্তু সড়কে আমাদের পর্যাপ্ত আধুনিক বাস দরকার।’
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, নগরীর সড়ক থেকে ধাপে ধাপে অবৈধ রিকশা সরানো হবে। ‘বিশেষ করে স্কুলগামীদের জন্য বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা না করে রিকশা দূর করা এক বড় চ্যালেঞ্জ।’
তিনি বলেন, ডিএনসিসির অধীনে ২৭ হাজার ৮৭২টি বৈধ রিকশা রয়েছে। ‘ডিএনসিসিতে চলা অবৈধ রিকশার পরিমাণ নিয়ে যদিও কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই, তবে সংখ্যাটি ৫ লাখের কম নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র জানান, ডিএনসিসি ইতিমধ্যে তাদের এলাকার স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের আনা-নেয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.