নতুন আতঙ্কে আ. লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীরা

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১২৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর এবং ২৫টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রোববার দলটির সভাপতির ধানমণ্ডিস্থ দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে তাদরে নাম প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এরপর একাধিকবার প্রার্থী পরবির্তন করায় মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে ‘বদল আতঙ্ক’ দেখা দিয়েছে।

ওই দিন সকালে ঢাকা উত্তরে ৫৪টি এবং দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে রাতেই দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে  পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিন প্রার্থী পরিবর্তনের কথা জানানো হয়। এর পরদিন সোমবার সকালে আবার পরিবর্তন করা এক প্রার্থীকে বদল করে আগের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার কথা বলা হয়। অপর একটি ওয়ার্ডেও প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী অদল-বদল করা হলো।

জানা গেছে, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় সমর্থন পেতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে, যা এখনো চলেছে। জোর তদবির-লবিং করে শেষ পর্যন্ত সমর্থনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় স্বস্তি এসেছিল প্রার্থীদের মধ্যে। কিন্তু দলের ওপর মহলের নির্দেশে প্রার্থী বদলে তাদের মধ্যে স্নায়ু চাপ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের সঙ্গে কথা না বলেই কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিতর্কিত এবং শুদ্ধি অভিযানে গা-ঢাকা দেওয়ারাও রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগরের সাবেক কয়েকজন নেতা ও এমপি।

গণভবনে ওই সাক্ষাতে অংশ নেয়া একজন নেতা টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে জানান, চলমান অভিযানের মধ্যে এমন বিতর্কিত ও অপকর্মকারীদের প্রার্থী করার কথা জেনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন নেত্রী। আমরা বলেছি, বিতর্কিত প্রার্থী দেয়া ওয়ার্ডগুলোতে উন্মুক্ত প্রার্থী দেয়ার জন্য। বিষয়টি দেখবেন বলে জনিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এমতাবস্থায় গত দুদিনে ৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী পরিবর্তন এবং গণভবনে বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়ায় প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয়া হতে পারে- এমন খবরে দলীয় সমর্থন পাওয়া প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা সমর্থন টিকিয়ে রাখতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

বিষয়টি নিয়ে দলীয় কোনো নেতা মন্তব্য করতে রাজি না হলেও প্রার্থীতা চূড়ান্ত করার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন নেতা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা বলছেন, দলীয় প্রধান বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে না দেখলে আমাদের অনেক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে হারতে পারে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১২ নং ওয়ার্ডে মুরাদ হোসেনের পরিবর্তে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তিতু, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১২ নং ওয়ার্ডে মামুনুর রশিদ শুভ্রর পরিবর্তে গোলাম আশরাফ তালুকদার, ৩৩ নং ওয়ার্ডে ইলিয়াস রশিদের পরিবর্তে মো: আউয়াল হোসেন এবং উত্তর সিটির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আগের প্রার্থীকে পরিবর্তন করে শফিকুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়। এর মধ্যে তিতুকে পরিবর্তন করে আবার মুরাদকে সমর্থন দেয়া হয়।

ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন পার হয়েছে। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই হবে ২ জানুয়ারি এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ৯ জানুয়ারি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে এবারের সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।