বিজিবি: চুক্তির লঙ্ঘন করছে বিএসএফ

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক গত কয়েকদিনে পাঁচজন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)। বিজিবি দাবি করেছে, চুক্তি লঙ্ঘন করে গুলি করেছে বিএসএফ।

বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্তে হত্যার ঘটনায় বিএসএফ আত্মরক্ষায় গুলি চালানোর যে বক্তব্য দিয়ে আসছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিটি ঘটনায় প্রতিবাদ করা হয়েছে।

সীমান্তে গুলি করে হত্যার ঘটনা সর্বশেষ ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। নওগাঁর পেরেশা উপজেলায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন তিন বাংলাদেশি। এর আগে লালমনিরহাটে নিহত হন দুইজন। সীমান্তে পরপর দুদিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

মানবাধিকার কর্মীরা জানায়, সীমান্তে হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখার প্রয়োজন।

চলতি জানুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে সীমান্তে কয়েকজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে এবং সংখ্যাটি অন্যান্য সময় থেকে বেশি। সমস্যা সমাধানে দু’দেশের মধ্যে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ বিষেয়ে বিজিবির অপারেশন বিভাগের পরিচালক লে: কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বিজিবি উদ্বিগ্ন। বিএসএফ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে যে বর্ণনা দিচ্ছে তা অগ্রহণযোগ্য। প্রতিটি ঘটনার পরি বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিজিবি-বিএসএফ চুক্তিতে বলা আছে অবৈধভাবে কেউ সীমান্তে গেলে তাকে ধরে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করবে বিএসএফ এবং পরবর্তীতে বিজিবি আইন আনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বিজিবি চুক্তি না মেনে গুলি বর্ষণ করছে।

লে: কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, হত্যার প্রতিবাদে বিজিবি প্রতিবাদ করলে তার জবাবে বিএসএফ জানায়, আত্মরক্ষার স্বার্থে তারা ননলিথাল অস্ত্র (প্রাণঘাতী নয়) ব্যবহার করে গুলি বর্ষণ করেছে। এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

সীমান্তে হত্যা বন্ধে বিজিবি-বিএসএফ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারে চুক্তি করেছিল দু'দেশ।

বিজিবির কর্মকর্তা জানান, চুক্তি মোতাবেক সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত। সে অনুযায়ী গত কয়েকবছর সীমান্তে হত্যা কম থাকলেও সম্প্রতি তা বেড়ে গেছে।

মানবাধিকার সংস্থার এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সীমান্তে ৩৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছিল। যা ২০১৮ সালের হিসেব থেকে তিনগুণ বেশি।

মানবাধিকার সংস্থার পরিচালক শীপা হাফিজা জানান, সীমান্তে হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ বের করা উচিত। কেননা এসব ঘটনা কোনভাবেই যুক্তিসংগত নয়। নিহতদের অনেকেই সীমান্তে ওপারে গিয়ে কাজ করেন যার কারণে তাদের সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।

গত অক্টোবরে রাজশাহী জেলায় পদ্মা নদীতে বিজিবি-বিএসএফ গোলাগুলিতে বিএসএফের একজন সদস্য নিহত হয়েছিলেন। সে ঘটনার পর সীমান্তে হত্যার ঘটনা বেড়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে বলে পরামর্শ দেন শীপা হাফিজা।

তবে শীপা হাফিজার এমন যুক্তি মানতে নারাজ বিজিবি'র লে: কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সাথে কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। বিএসএফ বাংলাদেশের ভেতরে এসে গুলি করছে না। বাংলাদেশি নাগরিক যখন সীমান্তে যাচ্ছে তখন গুলি বর্ষণ করা হচ্ছে। বিজিবির পক্ষ থেকে সেজন্য সীমান্ত এলাকার মানুষকে সতর্ক করার কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে। যাতে তারা অবৈধভাবে সীমান্তে না যায়।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ভারতের সাথে রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।