বাংলাদেশ-চীন যাতায়াত স্থগিত হতে পারে

এখন পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাসে অন্তত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেশটির অক্ষমতার কথাও উঠে আসছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে যাতায়াত সাময়িক স্থগিত করার চিন্তা করছে বাংলাদেশ সরকার। আগামীকাল ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হতে পারে। গতকাল রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক জুরুরি সভায় এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাণিজ্যক সম্পর্কের দিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক অনেক গভীর। বাংলাদেশ থেকে অগণিত মানুষ বাণিজ্যিক কারণে চীনে যাতায়াত করে থাকেন। সুতরাং যে কোনো উপায়ে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। তাই সাময়িকভাবে বাংলাদেশ-চীন যাতায়াত স্থগিত করা যায় নাকি তা নিয়ে একটি বৈঠক করতে হবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে।

সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বর্তমানে কতটি দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে এবং কতজন মানুষ এতে মারা গেছেন তার খোঁজ নেন।

বাংলাদেশের প্রতিটি বন্দর অর্থাৎ বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে অন্য দেশ থেকে আগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবগত করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় জরুরি বৈঠকের ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানালে তাতে মন্ত্রী সহমত পোষণ করেন। সে মোতাবেক আগামীকাল দুপুর ১২ মন্ত্রণালয়গুলোর অংশগ্রহণে বৈঠক অনুষ্ঠিত করার নির্দেশ দেন জাহিদ মালেক।

সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তির রোগ ধরা নাও পড়তে পারে। চীনে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। তারা সবাই ফিরে আসলে তাদের সাথে করোনাভাইরাসও বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। তাই চীন-বাংলাদেশ যাতায়াত সাময়িকভাবে স্থগিত করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে আজ সোমবার সকালে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, চীন থেকে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক ফিরে আসতে চাইবেন তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে চীনা সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করেছে।

চীনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশটিতে বসবাসরত বা ভ্রমণরত বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। এর নম্বর (৮৬)-১৭৮০১১১৬০০৫।

ভাইরাসটি ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্তত ১৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে তাদের বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি নানা ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

চীনের বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে সনাক্ত করা হয়। এক মাস পার না হতেই আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে অর্ধশত। তবে চীনা সরকার বলছে, নতুন ধরনের এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা অর্ধশতে দাঁড়ালেও আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারের কাছাকাছি। ভাইরাসটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এমন ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।