১৭৮৮ সালে নির্মিত পুরান ঢাকার বিখ্যাত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার’ এখন নতুন অবয়বে নতুন রূপে স্থানান্তর হয়েছে কেরানীগঞ্জে। অবশ্য শুধু বন্দী এবং প্রশাসনিক কাঠামোটাই যাচ্ছে কেরানীগঞ্জে। ইট-পাথরের দেহ এবং বহু স্মৃতি নিয়ে পুরনোটা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দীন রোডেই।
গত ১০ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন নবনির্মিত নতুন কারাগার। নতুন নির্মিত এই কারাগারেও মূল ফটকের উপরে বড় করে লেখা থাকবে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার’। ১৯৪ একরেরও বেশি জমিতে নির্মিত নতুন এই কারাগারটি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত।
বর্তমানে বন্দীদের রাখার জন্য মাত্র ৩১ একর জমিতে ভবন নির্মাণের কাজ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কাজ হবে। উদ্বোধন হয়ে গেলেও বন্দীদের জন্য নির্ধারিত আটটি ভবনের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র পাঁচটির। নির্মাণসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে মণিহার, মেঘনা নামে বিচারাধীন বন্দীদের দুইটি ভবনের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন।
৪০৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩১ একর জমিতে নির্মিত পুরুষ বন্দীদের জন্য(পুরুষ-১) ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ’ উদ্বোধন হয়েছে। কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। তবে ৭ থেকে ৮ হাজার বন্দী এটাতে থাকতে পারবে বলে জানা গেছে। নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ছিলো ২ হাজার ৬৮২ জন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে আছেন প্রায় ৮ হাজার বন্দী। নতুন কারাগারের প্রকল্পের মধ্যে একটি মহিলা কারাগারও নির্মিত হবে।
নতুন কারাগারের সীমানা প্রাচীরের উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। ইতোমধ্যে প্রাচীর নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। শুধুমাত্র বিচারাধীন বন্দীদের জন্য ছয়টি ছয় তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ছয়টির নাম, যমুনা, করতোয়া, কর্ণফুলী, পদ্মা, মেঘনা ও মণিহার।
প্রতিটি ভবনে কক্ষ আছে ৪০টি। প্রতিটি কক্ষের ধারণ ক্ষমতা ১৩ জন। দেয়া আছে চারটি সিলিং ফ্যান। প্রত্যেক ভবনের নিচ তলায় ডাইনিং ঘর। ভবনের পাশেই রান্নাঘর, একটি পাম্প হাউস ও ২০টি করে টয়লেটের ব্যবস্থা।
সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য দুইটি ভবন। মধুমতি ও রূপসা। দুটো ভবনই ৬ তলা করে। প্রতিটি ভবনের ধারণ ক্ষমতা ৫শ’ জন। বাদবাকী অন্যান্য সুবিধা প্রায় একইরকম।
চম্পাকলি নামে শ্রেণীপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য চার তলা একটি ব্যারাক বানানো হয়েছে। মোট থাকতে পারবে ৬০ জন। এছাড়া জলসিঁড়ি নামে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী বন্দিদের জন্য দোতলা একটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। এটির ধারণ ক্ষমতা ৩০ জন।
অত্যন্ত বিপজ্জনক বন্দীদের জন্য রয়েছে চার তলার চারটি বন্দীসেল। বনফুল, বকুল, সূর্যমুখী ও শাপলা। প্রতি সেলে থাকতে পারবে ১০০ জন। প্রয়োজনের মুহূর্তে থাকতে পারবে এরচেয়ে বেশিও।
ভিতরের প্রতিটি ভবন অন্তত ৬ ফুট উচ্চতার পৃথক প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রথমে প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকলেই প্রশাসনিক ভবন পাওয়া যাবে। বামে জেল স্কুল ও লাইব্রেরি। দক্ষিণে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী বন্দীদের ভবন। কারারক্ষী হাউস ও মেডিকেল ইউনিট একটু পাশেই।
পূর্ব দিকে পাবেন বিচারাধীন বন্দীদের ছয় ভবন। প্রধান ফটক থেকে ডানে কিশোর বন্দীদের ভবন ‘সুরমা’। এর দক্ষিণেই চম্পাকলি। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে একেবারে সোজা হাঁটলে ‘কেইস টেবিল’ নামে একটি খোলা বৈঠকখানা রয়েছে। এটি সালিশ বৈঠকের স্থান।
মধুমতি ও রূপসা নামে সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের ভবন দু’টি পাওয়া যাবে কেইস টেবিলের পশ্চিমে ও পূর্ব দিকে। বিপজ্জনক বন্দীদের ভবন চারটি পাওয়া যাবে মধুমতি ও রূপসার পাশেই। এর পাশেই গুদাম, ময়দার কল, ধোপাখানা, লন্ড্রি ও সেলুন।
ফাঁসির মঞ্চটা আবার বনফুলের দক্ষিণে। এছাড়া সীমানা প্রাচীরের বাইরে চার কোণায় ৪০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চারটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। কারাগারের বাইরে একেবারে বাম দিকে দর্শনার্থীদের স্থান।
কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের জন্য কারাগারের পশ্চিমে বাইরের দিকে আলাদা ভবন, অফিসার্স ক্লাব তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া নির্মাণ হবে স্টাফ ক্লাব, স্কুল, মসজিদ, মিলনায়তন ইত্যাদি। আর কারারক্ষীরা থাকার জন্য একটি ব্যারাক নির্মাণ হয়েছে কারাগারের একেবারে দক্ষিণে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।