হার্ড ইমিউনিটি: সক্ষমতা আছে তো বাংলাদেশের

সাধারণ ছুটিকে লকডাউন বলে চালিয়ে দেওয়া, নতুন পদ্ধতির লকডাউন কার্যকর করতে বিলম্বসহ নানা অব্যবস্থাপনা দেখা যাচ্ছে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে। ওদিকে করোনা তো বসে নেই, সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে বিদ্যুত গতিতে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার হাঁটছে হার্ড ইমিউনিটির দিকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ড ইমিউনিটি হলে ১ ভাগ মানুষকেও যদি হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হয় তাহলে সেটা বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব। তাই এই প্রক্রিয়ার দিকে গেলে দেশে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

যারা একবার ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এভাবে যত বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে তত শক্তিশালী হবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এভাবে সুরক্ষা বলয় তৈরি হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে এক সময় সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। এটাই হল হার্ড ইমিউনিটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় কোনো দেশ বা অঞ্চলের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে আক্রান্ত হতে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ আক্রান্ত হবে করোনাভাইরাসে!

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা মোকাবেলায় দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। একটি হল সাপ্রেশন, অন্যটি কনটেইনমেন্ট। সাপ্রেশন পদ্ধতিতে সবাইকে ঘরে আবদ্ধ করে এই রোগ মোকাবেলা করা হয়। অন্যদিকে কনটেইনমেন্ট পদ্ধতিতে হার্ড ইমিউনিটির পথ অনুসরণ করে রোগ ছড়াতে দেওয়া হয় যেন মানবদেহে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সৃষ্টি হয়। চীন, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, ভিয়েতনাম প্রথম পদ্ধতি অনুসরণ করে সফল হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, হার্ড ইমিউনিটি প্রয়োগ করার আগে ওই দেশের আর্থিক, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত দিকগুলো শক্তিশালী হতে হয়, যেন তারা কঠিন ওই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে। আমাদের দেশের কথা বিবেচনা করলে বলতে হয়, হার্ড ইমিউনিটি এখানে স্রেফ বিপর্যয় ডেকে আনবে। এই প্রক্রিয়ায় দেশে যদি ১৫ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয় এবং তাদের মধ্যে যদি ০.০০১ ভাগ মানুষকেও চিকিৎসা দিতে হয় তাহলে সেটা অসম্ভব হয়ে পড়বে।