আরো একটি হরিলুটের ঘটনা: কাজ না করেই কোটি টাকা বিল উত্তোলন!

দেশের স্বাস্থ্য বিভাগসহ এর অধীনে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর প্রায়ই সামনে আসছে। এতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আরো একটি কোটি টাকা হরিলুটের ঘটনা। এছাড়া দেশব্যাপী ৪৮৬টি কর্মশালা করার জন্য নেয়া এক প্রকল্পের ৭ কোটি টাকার সিল জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ তো রয়েছেই।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ২০১৮ সালে সচেতনতামূলক একটি ভয়েস ম্যাসেজ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ৯৯ লাখ টাকার ওই কাজের অদ্যাবধি কোনো খবর না থাকলেও এরই মধ্যে তুলে নেয়া হয়েছে পুরো বিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই ভয়েস মেসেজটি প্রস্তুত করে অধিদপ্তরের তথ্য, শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণ (আইইএম) ইউনিটকে দেয়া হয়। এটি এক কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে বেসরকারি সংস্থা কবির এন্টারপ্রাইজকে নির্বাচিত করে ইউনিটটি। সে অনুযায়ী ওই বছরের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটিকে এর কার্যাদেশও দেয়া হয়।

দুদক কার্যালয়

এরপর প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও তেমন কোনো মেসেজ এখন পর্যন্ত তৈরিই করা হয়নি, পাঠানো তো দূরের কথা! তবে এ কাজের পুরো টাকা এরই মধ্যে কবির এন্টারপ্রাইজকে পরিশোধ করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন এর মালিক কবির আহমেদ।

তিনি বলছেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভয়েস মেসেজটি আমাদের দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা পাননি। সেটি পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও আইইএম ইউনিটের বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশব্যাপী ৪৮৬টি কর্মশালা করার জন্য ৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়। মিথ্যা ও বানোয়াট বিল দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে পুরো টাকা।

জাল সিল তৈরি করে এ প্রকল্পের সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন আইইএমের পরিচালক ডা. আশরাফুন্নেছা। এ বিষয়ে তাকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

তাতে আশরাফুন্নেছা অধিকাংশ প্রশ্নের ঠিক উত্তর দেননি, এড়িয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। তবে সালাহউদ্দিন বলছেন, তার কাছে আসা অভিযোগগুলো যাচাই করে দেখছেন তিনি। যাচাই-বাছাইয়ের পর অভিযোগগুলোর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন দুদক সচিব।

অভিযোগ ওঠার পর একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, যার প্রধান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাব্বীর হোসেন। তিনি জানান, কয়েকটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। মাসখানেক আগে তারা একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, তাতে নানা অসঙ্গতির কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ২০১৮ সালে আইইএম পরিচালক পদে যোগ দেয়া ডা. আশরাফুন্নেছা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুরও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।