ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সরকারি ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সবাইকে জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে আজ সোমবার তিনি এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু হলো জাতীয় সংসদ। আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই, গণতন্ত্রায়ণ, সুশাসন ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার। জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে যাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করা যায়।

এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় বছরের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি বছরের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেন। বরাবরের মতো এবারো সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রা বেগবান করতে সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে আমাদের আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে যাতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়া যায়। আসুন, আমরা দল, মত ও পথের পার্থক্য ভুলে ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।

জাতীয় সংসদ, ফাইল ছবি

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। আমরা যে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে হাঁটছি, আমাদের আরো সে পথে এগিয়ে যেতে হবে। মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে আমরা এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১, ওই বছর বিশ্বসভায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা লাভ করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

আবদুল হামিদ বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় ফোর্সেস গোল-২০৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আলোকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরের ১৭টি ইউনিট গঠন করা হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে বাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। আজ বাংলাদেশ নৌবাহিনী দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নৌবাহিনীতে দুটি মেরিটাইম হেলিকপ্টার, ৩১টি জাহাজ এবং দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযোজিত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে আধুনিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হেলিকপ্টার, রাডার, বিমান, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গত বছরের ৩১ আগস্ট প্রথম স্থান পুনরুদ্ধার করেছে। বর্তমানে ৭টি দেশের ৭টি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী এবং পুলিশের মোট ৬ হাজার ৮৬৫ জন শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত আছেন। এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। এ লক্ষ্যে ১৮টি সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন ও সময়োপযোগী করা হয়েছে। দ্রুত যাতে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পাওয়া যায়, সেজন্য জাতীয় জরুরি সেবা (৯৯৯) চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন জিডি, নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সব থানায় পৃথক ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে পুলিশি সেবার মানোন্নয়ন করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেতুর দুই প্রান্তের মাওয়া ও জাজিরা সংযোগকারী সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপন করার মাধ্যমে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই নাগাদ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এর ফলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।