খোশ আমদেদ মাহে রমজান

হিজরি বর্ষের সঙ্গে মিল রেখে শুরু হয়েছিলো বাংলাবর্ষ। ৫শ বছর আগে সম্রাট আকবর বাঙালি মুসলিম কৃষকদের কথা ভেবে বাংলা সনের প্রচলন করেন। আরবি ৯৩৬ হিজরির মহররম মাসে বাংলাবর্ষের সূচনা হয়।

হিজরি সনের সঙ্গে মিল রাখতে গিয়ে বাংলা সনও ৯৩৬ থেকে গণনা শুরু হয়। তখন থেকেই পয়লা বৈশাখ বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। ছোটবেলায় দেখেছি, পয়লা বৈশাখের দিন মা-চাচীরা বাড়িঘর পরিষ্কার করতেন। আজও মুরুব্বিরা বলেন, বছরের প্রথম দিন ভালো গেলে প্রতিটি দিনই ভালো যাবে।

আল্লাহর কাছে অসংখ্য শোকরিয়া, এবারের নববর্ষ রোজার সুঘ্রাণ এবং তারাবির মনকাড়া সুরে শুরু হয়েছে। যদিও বাড়বাড়ন্ত করোনাভাইরাসের প্রকোপে বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোটেও সুখকর নয়। কিন্তু মাহে রমজানের হাওয়া বিশ্বে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে সেই দোয়া করছি।

বাঙালির আত্মার উৎসব নববর্ষ শুরু হয়েছে রোজা মুখে। আশা করি, বছরটি আমাদের জন্য অনেক ভালো যাবে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের ওপর সিয়াম সাধনা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আশা করা যায়, তোমরা মুত্তাকি হবে।’ (সুরা বাকারাহ: ১৮৩)।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে প্রতিদিনই মৃত্যুর সংবাদ আমাদের চোখ ভেজায়, মন ভারি করে। যেকোনো মুহুর্তে আমি আপনিও স্বজন-প্রিয়জনদের ছেড়ে পরম ঠিকানা মাবুদ রাব্বানার দিকে যাত্রা করব। পড়ে থাকবে আমাদের শত ব্যস্ততা। কাগজেই লেখা থাকবে দৈনন্দিন রুটিন। যে সভা-সমিতিগুলো আমাকে ছাড়া কল্পনাও করা যেতো না সেগুলোও অনুষ্ঠিত হবে।

এককথায়, সবকিছুই চলবে আপন গতিতে, সুন্দরভাবে। কেবল আমি-আপনি থাকব না। এমন পরিস্থিতিতে মুত্তাকি হওয়া ছাড়া কোনো উপায় কি আমাদের আছে?

এ দুনিয়ায় আমরা কেউ চিরদিন থাকব না। কোনো কিছুও আমার-আপনার জন্য আটকে থাকবে না। তাহলে নিষ্ঠুর দুনিয়া ও স্বার্থপর মানুষের পেছনে ছুটে কেনো বৃথা জীবন নষ্ট করা! তারচেয়ে তো এটাই বুদ্ধিমানের কাজ- মহান মাবুদের প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করা।

প্রভুপ্রেমে নিজেকে কীভাবে উৎসর্গ করতে হয়, খুব সুন্দর করে শিখিয়েছেন সুফি খান বাহাদুর আহছানউল্লা। একজন ভক্তকে তিনি উপদেশ দিয়ে লিখেছেন, ‘জাতি-বংশ, গৌরব-পদপদবী, ধন-জন কোনো কিছুই তোমাকে অশান্তির আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না। প্রভুর এক ফোটা রহমতই তোমাকে দুনিয়া-আখেরাতে শান্তির স্রোতে ভাসিয়ে রাখবে। তাই জীবন দিয়ে চেষ্টা করো দয়াময়ের এক ফোটা রহমতে নিজেকে সিক্ত করতে। সাধনা করো প্রভুরপ্রেমে নিজেকে বিলিয়ে দিতে।

একদিন দুদিন কিংবা দশ বছরেও যদি হৃদয়ে প্রভুর প্রেম জাগাতে না পারো, হতাশ হয়ো না। এ দুনিয়ায় যদি না পাও পরজগতে ঠিকই দয়াময়ের দয়া পাবে। মোটকথা, দয়াময়ের দয়া থেকে কখনোই নিরাশ হয়ো না। পাক কালামে আল্লাহ বলেছেন, ‘কেবল কাফেররাই আল্লাহর দয়া থেকে নিরাশ হয়।’ (সূরা ইউসুফ: ৮৭)।

প্রভুর প্রেমপ্রার্থীদের জন্য আনন্দের কথা হলো, হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মাহে রমজানের প্রথম দশদিনে অনবরত রহমতের বৃষ্টি ঝরতে থাকে।’

তাই আসুন এই দশদিন আমরা দুনিয়ার ব্যস্ততা কমিয়ে প্রভুর প্রেম সাগরে ডুবে থাকি। আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে বলি, হে আল্লাহ! করোনাভাইরাস থেকে আদম সন্তানকে আপনি রক্ষা করুন। নববর্ষের শুভ জোয়ার বাঙালির ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিন। আমিন।