আপনি পড়ছেন

বছর দুয়েক আগে একবার আলোচনা উঠেছিল যে, বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আগোরা। দেশের আরেক নামকরা চেইন শপ মীনা বাজারের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা শোনা যায় সে সময়। যদিও সে আলোচনা পরে আর আগায়নি। তবে এবার পুরোপুরি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আগোরা। সম্প্রতি মালিক পক্ষ এমনটাই জানিয়েছে গণমাধ্যমকে। ক্রেতা হিসেবে শ্রীলঙ্কান কোম্পানি সফটলজিক রিটেইলের কথা জানানো হয়েছে।

agora bd limitedআগোরা লিমিটেড

২০০১ সালে রহিম আফরোজ গ্রুপের উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সুপার শপের ধারণা নিয়ে আসে আগোরা। এরপর ৭২ শতাংশ শেয়ারের অংশীদারিত্ব নিয়ে এর মালিকানায় যুক্ত হয় সুইডিশ প্রতিষ্ঠান ব্রামার্স অ্যান্ড পার্টনার্স।

ইতোমধ্যে আগোরার শতভাগ মালিকানা কেনার ঘোষণা দিয়েছে শ্রীলঙ্কার উল্লিখিত কোম্পানিটি। আগোরার মালিকানার বৃহত্তম অংশীদার প্রাইভেট ইক্যুইটি ফান্ড ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স বাংলাদেশ জানিয়েছে, সফটলজিক রিটেইলের সঙ্গে তাদের সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে।

ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী তথা সিইও এবং আগোরার পরিচালক খালিদ কাদির চৌধুরী সুপার শপটি বিক্রির বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়েছে বলেন, আগামী ৩ থেকে ৫ মাসের মধ্যে মালিকানা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

আগোরার আরেক পরিচালক মোয়াল্লেম চৌধুরী বলছেন, বাংলাদেশে সুপার শপগুলোর মধ্যে তাদের বর্তমান অবস্থান দ্বিতীয়।

এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন ২০ বছরের বেশি সময় পর সুপার শপটি সম্পূর্ণ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মোয়াল্লেম চৌধুরী বলছেন, এটি ব্যবসার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ, সে হিসেবেই আগোরা বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা।

আগোরায় যাদের শেয়ার রয়েছে, তাদের অধিকাংশের ইচ্ছা অনুযায়ীই এর মালিকানা পরিবর্তন হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে বেসরকারি কোম্পানিগুলোতে যারা বিনিয়োগ করে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে একটা ম্যান্ডেটের বিষয় থাকে। অর্থাৎ নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাদের বিনিয়োগটা ফেরত দিতে হয়। চুক্তির সময়ই সেটা বলা থাকে। বিনিয়োগকারী ইচ্ছা করলে সেই সময় পর তাদের বিনিয়োগ তুলে নিয়ে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে পারেন। আগোরার ক্ষেত্রেও আসলে সে ধরনের ঘটনাই ঘটছে।

পাশাপাশি মোয়াল্লেম চৌধুরী বলছেন যে, সুপার শপ ব্যবসার বাজার এখনো বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। তবে বাংলাদেশে এর ভবিষ্যত আছে বলেও মনে করেন আগোরার এই পরিচালক। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনো ৯৮ শতাংশই প্রচলিত মার্কেট তথা খুচরা বিপণনের বাজার। এর বিপরীতে সুপার শপ বা চেইন শপগুলোর অংশীদারিত্ব মাত্র ২ শতাংশ।

এই অবস্থাটাকে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন মোয়াল্লেম চৌধুরী। অর্থাৎ এই সুযোগটাকে সুপার শপ ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ হিসেবে ধরা যেতে পারে। আবার অন্যভাবে বললে বলা যায় যে, এখনো বাংলাদেশে সুপার শপের বাজার তৈরি হয়নি। স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি যত দ্রুত পরিবর্তন হবে, বাংলাদেশে সুপার শপের পরিধিও সেই হারে বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

এ ছাড়া বাংলাদেশে সুপার শপের বিষয়ে সরকারের কিছু নীতির বিষয়ও আলোকপাত করেন আগোরার পরিচালক মোয়াল্লেম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে যেখানে অধিকাংশ ক্রেতা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের, সেখানে সুপার শপ বা চেইন শপগুলোর কেনাকাটার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। অথচ মুদি দোকান থেকে একই জিনিস কেনাকাটায় কোনো ভ্যাট দেওয়া লাগছে না। যা সুপার মার্কেট সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নানা ধরনের অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে ‘সহজ টার্গেট’ হিসেবে সুপার শপগুলোকে বেছে নিচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে যে অপরাধের কথা বলা হচ্ছে, এবং জরিমানা আদায় করা হচ্ছে; সেই একই অপরাধ প্রচলিত মার্কেটে অহরহ ঘটছে। কিন্তু সেখানে কোনো জরিমানা করা হচ্ছে না। 

কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে আগোরা

ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় পক্ষ আগোরা বিক্রি অথবা কেনার বিষয় নিশ্চিত করলেও ঠিক কী পরিমাণ অর্থে এর মালিকানা বদল হচ্ছে, সেটা কেউ উল্লেখ করেনি এখনো। সফটলজিক শ্রীলঙ্কার কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে শুক্রবার দেওয়া এক ঘোষণায় জানিয়েছে যে, তারা আগোরা লিমিটেডের শতভাগ মালিকানা কিনছে এবং কিস্তির মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করবে। কিন্তু ঘোষণায় ক্রয় বাবদ অর্থের কোনো পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে খালিদ কাদির চৌধুরী বলছেন, যেহেতু এটি একটি প্রাইভেট কোম্পানি সেহেতু এর ভ্যালুয়েশন নিয়ে তথ্য প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে এ সম্পর্কে যে তথ্য প্রকাশ করার, সেটা সময়মতো প্রকাশ করবে শ্রীলঙ্কান কোম্পানিটি।

যখন চূড়ান্ত লেনদেন হয়ে যাবে, তখন হয়তো সবাই জেনে যাবে যে, ঠিক কত টাকায় বিক্রি হলো আগোরা। তাছাড়া কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জেও হয়তো বিষয়টি নিয়ে সেই সময় কিছু একটা বলা হবে, মনে করেন আগোরার এই পরিচালক।

জানা যায়, শ্রীলঙ্কায় রিটেইল ব্যবসায় শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি এই সফটলজিক। এটি সফটলজিক হোল্ডিং পিএলসির সহযোগী কোম্পানি। ইলেক্ট্রনিক্স, মোবাইল হ্যান্ডসেট, বস্ত্র, আর্থিক সেবা, আইসিটি, অটোমোবাইল এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতেও এটির ব্যবসা রয়েছে। শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াতেও রয়েছে এর কার্যক্রম। দুই দেশ মিলিয়ে কোম্পানিটির কর্মীর সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি। বছরে প্রায় ৪২ কোটি ডলার আয় করে থাকে সফটলজিক।

অপরদিকে, রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেটে আগোরার আউলেট রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৫টি এবং চট্টগ্রাম ও সিলেটে রয়েছে ২টি আউটলেট। মোট ১৭টি আউটলেটে প্রায় ১ হাজার ২০০ কর্মী কাজ করছেন। মালিক পক্ষের দাবি, বিগত কয়েক বছর ধরে আগোরার টার্নওভার ছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

মালিকানা পরির্তনে বর্তমান কর্মীদের কী হবে

যেহেতু আগোরার শতভাগ মালিকানা চলে যাচ্ছে একটি বিদেশি কোম্পানির হাতে, সেহেতু প্রশ্ন উঠেছে মালিকানা পরিবর্তন হলে কোম্পানিটিতে বর্তমানে কর্মরতদের কী হবে। এমন প্রশ্ন উঠাও খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে আগোরার পরিচালক মোয়াল্লেম চৌধুরী মনে করছেন, মালিকানা অন্যদের হাতে গেলেও আগোরার বর্তমান কর্মীদের চাকরির কোনো সমস্যা হবে না।

তার মতে, কোনো কোম্পানি যদি একুইজেশন করে, তাহলে কর্মীদেরও পরিবর্তন করতে হবে- এমন কোনো কারণ নেই। তাছাড়া বিদেশি কর্মী আনার ক্ষেত্রে সরকারের তো কিছু নীতিমালা আছেই। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, যে ব্যবসা পরিচালনায় বাংলাদেশেই প্রয়োজনীয় কর্মী পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে বিদেশ থেকে কর্মী আনা প্রয়োজন নেই। আর এ ধরনের খুচরা ব্যবসায় বিদেশি কর্মীর তেমন কোনো প্রয়োজনও পড়ে না। সুতরাং আগোরায় এখন যারা কাজ করছেন, মালিকানা পরিবর্তন হলেও তারাই থাকবেন বলে প্রত্যাশা তার।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.