আপনি পড়ছেন

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। সংক্রমণ এড়াতে বিশ্বের বেশিরভাগ দোকান-পাট, কল-কারখানা, রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। চাকরি হারিয়ে ঘরে বসে আছেন বহু কর্মী। একই সমস্যার মধ্যে পড়েছেন ব্রিটেনে অবস্থিত বাংলাদেশি রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মীরাও। সেখানে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক শ বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ।

bangladeshi restaurent in britainব্রিটেনে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক শ বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে অবস্থিত বাংলাদেশি কয়েক শ রেস্তোরাঁ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে দেশটির নাগরিকরা সামাজিক দূরত্বে মেনে ঘরে থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুঃশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন সেখানকার রেস্তোরাঁ মালিক ও কর্মীরা। অনেকে আবার নিজের ব্যবসাকে বাঁচাতে টেলিফোন এবং অনলাইনে খাবার অর্ডার নেওয়া শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিঠু চৌধুরী বলেন, ২৮ বছর ধরে লন্ডনের কেন্ট কাউন্টির আবাসিক এলাকায় 'মোগল ডাইনাস্টি' নামের একটি কারি রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন তিনি। অনেকেই তার রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে আসতেন। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর তার কাস্টমার দ্রুত কমতে শুরু করে। ফলে সরকার থেকে নির্দেশ দেওয়ার আগেই তাকে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিতে হয়। দীর্ঘ ব্যবসায়িক জীবনে এমন সংকট তিনি আর দেখেননি।

তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমায় ব্যবসা বাঁচাতে টেলিফোন এবং অনলাইনে খাবার অর্ডার নেওয়া শুরু করেছেন তিনি। সাত জন কর্মী নিয়ে খাবার তৈরি করে মানুষের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছেন। তবে তার আরো ৯ জন কর্মী আছেন। আগের মতো ব্যবসা না থাকায় তাদের কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

bangladeshi restaurent in britain 2ব্রিটেনে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক শ বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ

এ রেস্তোরাঁ মালিক আরো বলেন, খাবার অর্ডার নিয়ে কাস্টমারদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিলেও তার ব্যবসা আগের মতো নেই। বিক্রি কমেছে ৬০ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে রেস্তোরাঁ পুরোপুরি খুললেও তাকে বাধ্য হয়ে ব্যবসা কমাতে হবে। ২৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইও করতে হতে পারে।

তিনি আরো জানান, ব্রিটেনে কারি রেস্তোরাঁ শিল্পে মালামাল সরবরাহকারীদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি জরিপ করেছেন তারা। এ জরিপে দেখা গেছে, গত ছয় সপ্তাহে বিভিন্ন শহরে অন্তত ৩০০ বাংলাদেশি কারি রেস্তোরাঁ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

ব্যবসা পুরোপুরি গুটিয়ে নেওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে মালিকরা বলছেন, রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় তারা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল এবং কর্মীদের বেতন দিতে পারছেন না। তাই রেস্তোরাঁ পুরোপুরি বন্ধ করে ভবন মালিকদের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন।

একই অবস্থা লন্ডনেও। শহরের ব্রিক লেনে অবস্থিত বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ 'সিটি স্পাইসে'র মালিক আব্দুল আহাদ জানান, গত আট সপ্তাহ ধরে টানা তার ১২০ আসনের রেস্তোরাঁটি বন্ধ রয়েছে। ফলে ঘরে বসে আছেন তিনিসহ তার ১৩ কর্মী। তার মতোই ব্যবসা বন্ধ রয়েছে অন্যদেরও। তবে গত কয়েকদিন দু-একটি রেস্তোরাঁ খাবার ওর্ডার নিয়ে কাস্টমারদের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু করেছে।

bangladeshi restaurent in britain 3ব্রিটেনে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক শ বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ

তিনি বলেন, সারা জীবনের শ্রম দিয়ে তিনি তার রেস্তোরাঁটি দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যে ক্ষতি তার হচ্ছে, তা কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর লেগে যাবে। এমনকি রেস্তোরাঁ খুললেও আগের মতো ব্যবসা চলবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে তার। কারণ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কারণে কতজন কাস্টমার রেস্তোরাঁয় ঢুকবে এ নিয়েও সন্দিহান তিনি।

আর্থিক ক্ষতি ও কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা বলছেন বার্মিংহাম ও লন্ডনের পার্শ্ববর্তী গ্রাম এসেক্স কাউন্টির রেস্তোরাঁ মালিকরাও। ইতোমধ্যে কয়েকজন মালিক তাদের কর্মীদের ছাঁটাইও করেছেন।

এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় রেস্তোরাঁ খোলার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের উঁচু পর্যায়ের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ সমিতির নেতারা। এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিঠু চৌধুরী জানান, আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে রেস্তোরাঁ-বার খোলার অনুমতি দেওয়া হতে পারে বলে তারা সরকারের কাছ থেকে ধারণা পেয়েছেন।

চলতি মাসের ২১ তারিখের দিকে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসতে পারে। তবে রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দিলেও সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বেশ কিছু শর্ত দিতে পারে সরকার। ফলে রেস্তোরাঁ খুলতে পারলেও আগের মতো ব্যবসা হবে কি না এ নিয়ে চিন্তিত তারা।