গত কয়েক দশকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বেশ কিছু প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এর মধ্যে রয়েছে বাইজি ডলফিন, বিশেষ প্রজাতির কাকাতুয়া স্প্রিক্স মস্কো, লিভারপুলের কবুতর এবং পশ্চিম আফ্রিকার কালো গণ্ডারের মতো বন্যপ্রাণী। হারিয়ে যেতে বসেছিল ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপের এ্যাসপ্যানোলার দানবীয় কাছিমও। তবে ‘দিয়াগো’ নামের একটি কচ্ছপের কারণে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায় এই প্রজাতিটি।
অসংখ্য কাছিম ছানার জন্ম দিয়ে ‘লাভার বয়’ খ্যাতিও পায় দিয়াগো। তবে নিজের পুরো প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে এবার অবসর জীবন কাটাতে যাচ্ছে শতবর্ষী এ কচ্ছপটি। শীঘ্রই তাকে উন্মুক্ত প্রাকৃতিক স্থানে মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গ্যালাপাগোস ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় অর্ধশত বছর আগেও দ্বীপটিতে এ প্রজাতিটির মাত্র ২টি পুরুষ এবং ১২টি নারী কচ্ছপ জীবিত ছিল। কিন্তু তারা পুরো দ্বীপে এতটাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল যে, তাদের একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়াটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। গবেষকরাও ধরে নিয়েছিলেন, এ প্রজাতিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে আর রক্ষা করা যাবে না।
তখনই গবেষকরা খোঁজ পান 'দিয়াগো'র। পরে ১৯৭৭ প্রজনন কর্মসূচির অংশ হিসেবে কচ্ছপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালির্ফোনিয়ার সান দিয়াগো চিড়িয়াখানা থেকে গ্যালাপাগোস দ্বীপে নিয়ে আসা হয়। দ্বীপটিতে ছেড়ে দেওয়ার পর দিয়াগো অল্প সময়ের মধ্যেই স্ত্রী কচ্ছপগুলোর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং কয়েক দশকের মধ্যে ৮০০ কাছিম ছানার জন্ম দেয়। তার প্রচেষ্টায় বর্তমানে দ্বীপটিতে এ বিশেষ প্রজাতির ২০০০ কচ্ছপ রয়েছে। যার ৪০ শতাংশেরই অবদান তার একার।
পার্কের পরিচালক জর্জি ক্যারিওন এএফপিকে জানান, প্রজাতিটিকে রক্ষার জন্য প্রজনন কর্মসূচির আওতায় মোট ১৫টি কচ্ছপ অংশ নেয়। তবে দিয়াগোর মতো ভূমিকা কেউই পালন করতে পারেনি। সে একাই অনেকগুলো কাছিম ছানার জন্ম দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, গ্যালাপাগোস দ্বীপের এ্যাসপ্যানোলাতে প্রজনন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৮০০টি এবং প্রাকৃতিকভাবে আরো ২০০টি কচ্ছপ জন্ম নিয়েছে। বর্তমানে এখানে ২০০০ কচ্ছপ রয়েছে। তাই এখন আর এখানে এই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া নিজ প্রজাতি রক্ষায় দিয়াগোর দায়িত্ব শেষ হওয়ায় তাকে এবার উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, দানবীয় আকৃতির দিয়াগোর ওজন প্রায় ১৩টি মাঝারি আকৃতির শিল পাথরের সমান এবং দৈর্ঘ্য ১.৫ মিটার। এ প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম চেলোনয়েডিস হুডেন্সী।