আপনি পড়ছেন

আরবি ‘জিহাদ’ শব্দটি এসেছে জাহাদা-ইয়াজহাদু ওজনে বাবে ফাতাহা-ইয়াহতাহু থেকে। আরবি ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে, জিহাদ শব্দটির অর্থ হলো, কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সফলতা লাভের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। কোনো শিক্ষার্থী যখন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কোমড় বেঁধে পড়াশোনা করে তখন আরবি ভাষায় বলা হয় ‘হুয়া ইয়াজহাদু লি আফলাহাল ইমতিহান।’ অর্থ: ‘সে পরীক্ষায় সফলতা লাভের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’

ramadan background images 3

জিহাদ শব্দের আরেকটি অর্থ হলো কষ্ট স্বীকার করা। রাতে ঘুম থেকে ওঠা খুব কষ্টকর। তাই ঘুম থেকে ওঠে যে নামাজ পড়া হয় তার নাম দেয়া হয়েছে সালাতুত তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদ শব্দের মূলে আছে জিহাদ শব্দটি।

জিহাদ শব্দের তৃতীয় অর্থটি হলো, শত্রুর মোকাবেলায় সাধ্যমত সংগ্রাম করা। পবিত্র কোরআনে এ অর্থে জিহাদ শব্দটির ব্যবহার পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন এটিও এক প্রকার জিহাদ।

জহাদের সংজ্ঞায় বুখারি শরিফের বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, জিহাদ শব্দটির দুই ধরনের অর্থ হয়। একটি হলো- আম তথা ব্যাপক অর্থ। আরেকটি হলো- খাস তথা বিশেষ অর্থ। ব্যাপক অর্থে জিহাদ হলো- নিজের প্রবৃত্তি, শয়তান এবং প্রতিটি পাপের সঙ্গে ভেতরে-বাইরে সংগ্রাম করা। এ জন্য পড়াশোনা করা, ইবাদতবন্দেগিতে লেগে থাকা, হারাম ছেড়ে হালাল উপার্জন করা, মিথ্যা ছেড়ে সত্য বলা এসসব কিছুই জিহাদের অন্তর্ভূক্ত।

জিহাদের বিশেষ অর্থটি হলো, আল্লহদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করা। আর এটা অবশ্যই নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতির আলোকে হয়ে থাকে। চরমপন্থী এবং সন্ত্রাসীগোষ্ঠী এখানেই ভুলটা করে থাকে। তারা জিহাদের এই বিশেষ অর্থটিকে সাধারণ অর্থে নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে থাকে। আর একে ইসলামের মোড়কে বৈধতা দিতে চায়। অথচ কোরআন স্পষ্ট করে অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা এবং সন্ত্রসাসী কার্যক্রমকে ঘোরতর অপরাধ বলে চিহ্নিত করেছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে একজন মানুষকেও হত্যা করবে সে যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করল।’ সূরা মায়েদা, আয়াত ৩২।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, পুরো পৃথিবীর মানুষ মিলেও একজন মানুষের প্রাণ দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। তাই অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করা আসলে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করারই নামান্তর।

সূরা ফোরকানে আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণই সুমহান মর্যাদামন্ডিত। কোনো প্রাণকে হত্যা করো না এবং ব্যভিচার করো না। যে এমনটি করবে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। সূরা- ফোরকান : আয়াত ৬৮।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জিহাদ শব্দটির ব্যাপক অর্থ বাদ দিয়ে এটির সংকীর্ণ অর্থটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে, একদল মানুষ জিহাদ বলতেই হত্যাকাণ্ড কিংবা সন্ত্রাসীকর্মকাণ্ডকে বুঝে থাকে। এটাকে এক ধরনের অপবাধ ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে। অথচ পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে হাজারো উদ্ধৃতি রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, মানুষ হত্যা ভয়াবহতম অপরাধের মধ্যে অন্যতম একটি অপরাধ।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে বড় অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধগুলো হলো- তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ অন্য একটি হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে এবং সর্বপ্রথম খুনের বিচার বসবে।’ সুনানে নাসায়ি শরিফ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর