আপনি পড়ছেন

হিজরত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা অত্যাচারিত হয়ে আল্লাহর পথে হিজরত করে, আমি তাদের দুনিয়াতে উত্তম ঠিকানা দান করব। আর আখিরাতের পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। আফসোস, যদি তারা বুঝত।’ সুরা নাহল, আয়াত: ৪১। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা পরে ইমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছে, তারাও তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। সুরা আনফাল, আয়াত: ৭৪।

eidul azha

হিজরত শব্দের আভিধানিক অর্থ ছেড়ে দেওয়া, বর্জন করা, রেখে দেওয়া, ত্যাগ করা ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, কাফেরদের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে দারুল কুফর তথা কুফুরি ভূখণ্ড ত্যাগ করে দারুল ইসলাম তথা ইসলামী ভূখণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়াকে হিজরত বলে (তাফসিরে রুহুল মাআনি)। মোল্লা আলী কারি (রহ.) মিশকাত শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে লেখেন, ইসলামের প্রচার-প্রসারের কারণে জন্মভূমি ত্যাগ করাকেও হিজরত বলা হয়। এ ধরণের হিজরতকে মুস্তাহাব হিজরত বলে।

ইসলামী আইনবিদরা বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফুরি ভূখণ্ড থেকে হিজরত করা মুস্তাহাব ছিল। সে নির্দেশ মোতাবেক একদল সাহাবি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। পরবর্তীতে রাসুলে আরাবি (সা.) মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করলে মুসলমানদের জন্য সেখানে হিজরত করা ফরজ হয়ে যায়। কিন্তু অষ্টম হিজরিতে সে বিধান রহিত হয়ে যায়। এর পর থেকে হিজরত আবার মুস্তাহাবের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে সুনানে আবু দাউদের ‘কিতাবুল জিহাদ’র ‘বাবুল হিজরাতি হাল ইনকাতিআত’ অধ্যায়ে হজরত মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, হিজরতের হুকুম ততক্ষণ পর্যন্ত রহিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাওবার দরজা বন্ধ না হয়। আর তাওবার দরজা ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে না।

এ অধ্যায়ে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। তবে জিহাদ এবং ভালো নিয়তের প্রয়োজন হতে পারে। তোমাদের ওপর আক্রমন করলে তোমরা আক্রমণ প্রতিহত করবে।’ মুহাদ্দিসরা এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, মক্কা বিজয়ের পর ফরজ হিজরত রহিত হয়েছে ঠিক তবে মুস্তাহাব হিজরত বলবৎ রয়েছে, কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। সুনানে আবু দাউদ।

অমুসলিম দেশ থেকে মুসলিম দেশে হিজরত করা যায়েজ। কোনো মুসলমান যদি এমন কোনো অমুসলিম দেশে বসবাস করে, যেখানে ইসলামের কথা প্রকাশ করা সম্ভব নয়, তাহলে সামর্থ্য থাকলে নারী-পুরুষ সবার জন্য ওই দেশে থেকে হিজরত করা আবশ্যক হয়ে যায়। আর এ ধরনের রাষ্ট্রে কোনো মুসলমান নিজ দেশ ত্যাগ করে বসবাস কিংবা চাকরির উদ্দেশ্যে যাওয়া উচিত নয়। শুধু ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য জন্য যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন ওলামায়ে উম্মত।

আর যে ভূখণ্ডে নিজের ইমানের কথা প্রকাশ করতে পারে ও ইসলামের যাবতীয় বিধান পালন করা যায়, সেই ভূখণ্ড থেকে হিজরত করা জরুরি নয়। তবে এমন অবস্থায় কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে হিজরত করা মুস্তাহাব। মোল্লা আলী কারি (রহ.) লিখেছেন, ‘হিজরত তথা দেশ ত্যাগ করে মদিনা যাওয়া রহিত হয়ে গেছে। তবে জিহাদের জন্য বা ভালো নিয়ত তথা কাফির রাষ্ট্র ত্যাগ করা কিংবা বিদআত থেকে পলায়ন করা অথবা অজ্ঞতা ও ফিতনা থেকে পলায়ন করা বা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য হিজরত করার বিধান এখনো আছে। এ বিধান রহিত হয়নি।’ মিরকাতুল মাফতিহ, ৪র্থ খন্ড, ১৮২পৃ.।

কোনো মুসলমান এমন অমুসলিম দেশে বসবাস করা ঠিক নয়, যেখানে দ্বীনি কাজ আদায় করা তথা ফরজ আদায় করা সম্ভব নয়। সামর্থ থাকলে ওই দেশ থেকে হিজরত করা তার জন্য জরুরি। তেমনি কোনো ব্যক্তি বসবাসের জন্য বা দীর্ঘস্থায়ীভাবে এমন দেশে ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করাও ঠিক নয়। তবে দাওয়াতের নিয়ত থাকলে ভিন্ন কথা। আর যে অমুসলিম দেশে দ্বীনি কাজ আদায় করা যায়, সেখানকার মুসলমানদের কোনো মুসলিম দেশে হিজরত করা করাতে নিষেধ নেই বরং ভালো।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর