আপনি পড়ছেন

মহান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় স্বাভাবিক নিয়মেই ঋতুর পালাবদল ঘটে। কিন্তু মাঝে মাঝে প্রকৃতির রূঢ় আচরণ মানুষের অসহায়ত্বকে বড় করে দেখিয়ে দেয়। হিমেল হাওয়া ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দরিদ্র জনগোষ্ঠী-অধ্যুষিত অঞ্চলে বিরূপ প্রভাব ফেলে। হতদরিদ্র অনেক মানুষেরই প্রচন্ড শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য ন্যূনতম শীতবস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য, উপযুক্ত আশ্রয় বা বাসস্থানের সুবিধা থাকে না। হাড়কাঁপানো শীতে তাদের অনেককেই খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে হয়।

shit

ছিন্নমূল অসহায় মানুষকে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত মোকাবেলার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এমন বাস্তবতায় শীতার্ত মানুষের প্রতি সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের সাহায্য-সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়া জরুরি। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই ইসলামের শিক্ষা। এ মহৎ ও পূণ্যময় কাজই সর্বোত্তম ইবাদত।

তীব্র শীতের প্রকোপে নিদারুণ কষ্ট ও মানবেতর জীবন যাপন করছে দেশের লাখ লাখ দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, গরিব, দুঃখী, বস্ত্রহীন শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সুচিকিৎসা, ওষুধপত্র এবং শীত মোকাবেলায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে কার্যকর উদ্যোগ।

শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর হার বাড়বে। এ জন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ দলমত-নির্বিশেষে বিত্তবানদের শীতার্ত মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়ানো উচিত।

যারা মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাদের পরকালীন পুরস্কার সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন।’ আবু দাউদ শরিফ।

দুর্যোগময় মুহূর্তে মন-প্রাণ খুলে আর্তমানবতার সেবায় সাহায্যের হাত বাড়ানোর ফজিলত সম্পর্কে অন্য একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার জীবনে একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার বিপদগুলো দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন।’ মুসলিম শরিফ।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে সাহায্য করেন, যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। মুসলিম শরিফ।

সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, ব্যবসায়ীসহ সামাজিক স্বেচ্ছাসেবামূলক সংস্থা ইচ্ছা করলে তাদের নিজ নিজ এলাকার শীতার্ত অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য শীতবস্ত্র সংগ্রহ এবং বিতরণ করতে পারেন।

হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, রোজ কিয়ামতের দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বিশষে প্রশান্তিদায়ক খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে কেয়ামতের দিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে কেয়ামতের দিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তাকে শান্তিময় জীবন দেয়া হবে।’ বায়হাকি শরিফ।

আমাদের সবার মাঝে পারস্পরিক মানবতাবোধ ও উদারনৈতিক মনমানসিকতা জাগিয়ে তোলার এখনই সময়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাঝে মানুষের প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে দিন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর