আপনি পড়ছেন

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর এই দেশে নেয়ামতের ডালি নিয়ে বর্ষা এসেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের অগণিত নেয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। আল্লাহর নেয়ামত সম্পর্কে ভাবতে গেলে কৃতজ্ঞতার সেজদায় দেহ-মন নুয়ে আসে। আল্লাহ তায়ালার অন্যতম নেয়ামত হলো বর্ষা।

apr apr6 blog rain li

গ্রীষ্মের দাবদাহে পৃথিবী যখন চৌচির হয়ে যায়, প্রাণীকুলের বেঁচে থাকা এক রকম ফুরিয়ে আসে, খরা-রোদে পৃথিবীকে মনে হয় শতবর্ষী বৃদ্ধ- এমন তীব্র হতাশায় রহমতের ঝর্ণা খুলে দেন আল্লাহ তায়ালা। আকাশ ফুড়ে বৃষ্টি ঝরে। জমিন উর্বর হয়। মরা পৃথিবী জেগে ‍উঠে। প্রাণীকুলে বাঁচার আশা জাগে।

বর্ষা ঋতুর একটি দৃশ্য এঁকে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই সে আল্লাহ, যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য পানীয় এবং তা থেকে উৎপন্ন হয় উদ্ভিদ; যেখানে তোমরা জন্তু চরাও। সূরা নাহল, আয়াত ১০।

এ আয়াতের তাফসিরে মুফাসসিরগণ লিখেন, আগের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালা জমিনে বিচরণশীল প্রাণীগুলো মানুষের কী কী উপকারে আসে তা বলা হয়েছে। আর এ আয়াতে বলা হয়েছে, আকাশের মেঘমালা থেকে বর্ষিত বৃষ্টি মানুষের কী কী উপাকারে আসে সে সম্পর্কে। আকাশ থেকে বর্ষিত বৃষ্টি মানুষের তিনটি বড় উপকারে আসে।

প্রথমত, তা মানুষ পান করে তৃষ্ণা মেটায়। গবেষণায় দেখো গেছে, বৃষ্টির পানির মত এত বিশুদ্ধ পানির অস্তিত্ব আর কোথাও নেই। প্রাচীন চিকিৎসকরা অনেক জটিল রোগের চিকিৎসায় বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন। হাদিস শরিফে পাওয়া যায়, বৃষ্টির পানিতে রাসুল (স) আগ্রহ নিয়ে ভিজতেন। আমরাও যদি রাসুর (সা.) এর অনুকরণে বৃষ্টিতে ভিজি তাহলে আমাদের আমলনামায় সুন্নত পালনের অশেষ নেকি লেখা হবে।

দ্বিতীয়ত, বৃষ্টির পানি বৃক্ষ ও ফসল উৎপন্নের জন্য জরুরি উপাদান। বৃষ্টি না হলে ফসল ও বৃক্ষ কিছুই হতো না। ফলে মানুষের জীবন ধারণ পুরোপুরি অসম্ভব হয়ে পড়ত।

তৃতীয়ত, মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহপালিত পশু ও যানবাহনের কাজে ব্যবহৃত পশু বাগানে বা মাঠে চড়ানো হয়। আর এখানে ঘাস জন্মায় বৃষ্টির কারণেই। তাছাড়া এসব প্রাণী বৃষ্টির পানি পান করেই জীবন ধারণ করে থাকে। ফলে মানুষের বেঁচে থাকার পেছনে বৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে কুরতুবি এবং তাফসিরে জাকারিয়া।

বর্ষা এলে প্রকৃতি সবুজ-সতেজ-নির্মল হয়ে উঠে। পাখির কলকাকলিতে প্রকৃতি মুখর হয়। নদ-নদী খাল বিল প্রাণ ফিরে পায়। বর্ষা ঋতুতে মহান আল্লাহ আমাদের উপহার দেন বিচিত্র ফুল, ফল ও সবজি। বাগানে ফোটে গন্ধরাজ, বাগানবিলাস, শ্বেতরঙ্গন, টগর, জুঁই, কেয়া, কদম ও হাসনাহেনাসহ নাম না জানা আরও অনেক ফুল। গাছে দেখা যায় পেয়ারা, আমড়া, কামরাঙা, ডেউয়া, জামরুল, লটকন, গাবসহ রকমারি ফল।

সবজির তালিকায় যোগ হয় ঢেঁরস, করল্লা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, পটল, বরবটিসহ বিচিত্র সব সবজি। এতসব নেয়ামত দেখে অজান্তেই মনে পড়ে যায় সূরা রহমানের সেই আয়াতটি- ‘ফাবিআইয়ি আলা ইরাব্বিকুমাতু কাজ্জিবান। তোমার প্রভুর কোন নেয়ামতটি তুমি অস্বীকার করবে!’ না হে আল্লাহ! আপনার কোনো ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর নেয়ামতও অস্বীকার করা যায় না, যাবে না। আপনি মহান। আপনার সৃষ্টির অপরূপ। আপনি জুলজালালি ওয়াল ইকরাম।

বর্ষার প্রাকৃতির সৌন্দর্য দেখে কবি-সাহিত্যিকরা অসংখ্য গান-কবিতা রচনা করেছেন। তবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই বর্ষা সম্পর্কে ছন্দের তুলিতে নির্ভুল সত্যটি এঁকেছেন। বর্ষার প্রথম বর্ষণ দেখে কবি গুরু বলেন, ‘এসেছে বরষা, এসছে নবীনা বরষা, গগন ভরিয়া এসেছে ভুবনভরসা।’ পৃথিবীবাসীর জন্য বর্ষা নতুন ভরসা। নতুন করে বাঁচার প্রেরণা।

হে আল্লাহ! বর্ষার বৃষ্টিতে করোনা নামক মহামারি ধুয়ে মুছে সাফ করে দিন। আমাদের উপহার দিন একটি সুস্থ ও সুন্দর নতুন পৃথিবী। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর