আপনি পড়ছেন

মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির সৃষ্টির পর পরই তাদের হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে মোট ১০৪টি আসমানি গ্রন্থ পৃথিবীর বুকে নাজিল করেছিলেন। এর মধ্যে ১০০টি ছোট গ্রন্থ। যেগুলোকে সহিফা বলে। আর ৪টি বড় গ্রন্থ। যেগুলোকে কিতাব বলে। তাওরাত-যাবুর-ইঞ্জিল ও কোরআন এ চারটি বড় গ্রন্থসহ বাকি একশটি আসমানি গ্রন্থের অনুসারীদের ইসলামী পরিভাষায় আহলে কিতাব বলা হয়। এটা ইমাম আবু হানিফাসহ একদল আলেমের অভিমত। তবে তার দুই ছাত্রের মতে, শুধু ইহুদি-খ্রিস্টানরাই আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত, অন্যরা নয়। 

islam 3

একদল ইসলামী চিন্তাবিদের মতে, যদি কোনোভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়, কোনো ধর্মের মূল গ্রন্থ আসমানি গ্রন্থ ছিলো, তাহলে তারাও কোরআনে বর্ণিত আহলে কিতাবের সমান মর্যাদা এবং অধিকার মুসলমানদের থেকে পাবেন। মাওলানা শিবলি নোমানি, কাসেম নানুতুবি এবং মুজাদ্দেদ আলফেসানি (রহ.)সহ অনেক ইসলামি পন্ডিত এ বিষয়ে বিভিন্ন গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

আহলে কিতাবি মেয়েদের বিয়ে করা মুসলমানদের জন্য জায়েজ। এক্ষেত্রে কোনো কোনো ইমাম কিছু শর্তারোপ করেছেন। কোরআন আহলে কিতাবি মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে বলেছে, ‘সচ্চরিত্রা নারী মুসলিম হোক কিংবা আহলে কিতাবি হোক তাদেরকে মহরানা পরিশোধ করে বিয়ে করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো।’ সূরা মায়েদাহ, আয়াত : ৪।

আয়াতে ‘মুহসিনাত’ শব্দের অর্থ সচ্চরিত্রা। অর্থাৎ ব্যভিচার থেকে মুক্ত নারী। তবে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ভিন্ন কথা বলেছেন। তার গবেষণায়, মুহসিনাত অর্থ হলো স্বাধীন নারী। অর্থাৎ যে নারী যুদ্ধবন্দি কিংবা দাসী নয়। এ অর্থ নিলে ফতোয়া হবে- আহলে কিতাবি স্বাধীন নারী সচ্চরিত্রা বা অসৎ চরিত্রের হলেও তাকে বিয়ে করা জায়েজ। দাসী হলে জায়েজ নয়।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, আহলে কিতাবি দাসীকে বিয়ে করাও বৈধ। সূরা নিসায় ১৬ ধরনের নারীকে বিয়ে করা হারাম ঘোষণার পর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘এসব নারী ছাড়া অন্যসব নারীকে বিয়ে করা তোমাদের জন্য বৈধ।’ সূরা নিসা, আয়াত ২৪। এ আয়াতে অন্য সব নারীদের মধ্যে আহলে কিতাবি দাসীরাও অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) আরো বলেন, সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে সচ্চারিত্রা নারী বিয়ে করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন মাত্র। এ থেকে দাসী কিংবা অসচ্চিত্রা মেয়ে বিয়ে করা হারাম তা বোঝানো হয়নি।

সাহাবিদের মধ্যে হজরত উসমান বিন আফফান, তালহা বিন উবায়দুল্লাহ, হুজায়ফা বিন ইয়ামিন এবং কাব বিন মালেক (রা) খ্রিস্টান নারীকে বিয়ে করেছিলেন। তবে ইবনে ওমর এবং ইবনে আব্বাস (রা.) এ ধরনের বিয়েকে মোটেই পছন্দ করতেন না।

islamic couple

অনেকে সূরা বাকারার একটি আয়াতের আলোকে বলেন, আহলে কিতাবি নারীদের বিয়ে করা হারাম। আয়তাটি হলো, ‘মুশরিক নারীদের তোমরা বিয়ে করো না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মুমিন না হয়।’ সূরা বাকারা, আয়াত : ২২১।

এ প্রসঙ্গে আহকামুল কোরআনের লেখক আল্লামা আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, একমাত্র ইবনে ওমরই (রা.) আহলে কিতাবি নারীদের বিয়ে করা ঘোরতর অপছন্দ করতেন। আর সাহাবিদের বড় একটি অংশ একে বৈধ মনে করতেন। সূরা বাকারায় যে মুশরিক নারীদের বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা মূলত আহলে কিতাবি ছাড়া অন্য মুশরিক নারীদের বেলায় প্রযোজ্য।

ইমাম হাম্মাদ (রহ.) বলেন, আমি সাঈদ ইবনে জুবাইর (রা.)কে জিজ্ঞেস করলাম, আহলে কিতাবি নারীদের বিয়ে করার হুকুম কি? তিনি বললেন, এটা জায়েজ। আমি আবার, জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু মুশরিক নারীদের বিয়ে করা তো কোরআনে হারাম করা হয়েছে। সাঈদ (রা.) বললেন, এ হুকুম আহলে কিতাবি ছাড়া অন্য নারীদের বেলায় প্রযোজ্য।

অর্থাৎ, সাধারণ মুশরিক-কাফের নারীকে বিয়ে করা হারাম। কিন্তু আহলে কিতাবি নারী মুশরিক হলেও তাকে বিয়ে করা জায়েজ। তাফসিরে মাজহারিতে ইমাম আবু হানিফার (রহ.) এ মতের সমর্থক বলে একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে। ড. ইউসুফ আল কারযাভী (রহ.) বলেছেন, এটা ইসলামের সুমহান উদরতার অনুপম দৃষ্টান্ত যা পৃথিবীর আর কোনো ধর্মে পাওয়া যায় না।

কেউ কেউ বলেন, আহলে কিতাবি নারীদের বিয়ে করার আয়াত রহিত হয়ে গেছে। কিন্তু মুশরিক নারীদের বিয়ে করা হারাম সম্পর্কিত আয়াতটি নাজিল হয়েছে আগে। আর আহলে কিতাবিদের বিয়ে করা বৈধ আয়াত নাজিল হয়েছে পরে। পরে নাজিল হওয়া আয়াত আগে নাজিল হওয়া আয়াতকে সচরাচর রহিত করে না। আল ইতকানে জালালুদ্দিন সুয়ুতি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

তবে আলেমদের বড় একটা অংশ সুরা বাকারার উল্লিখিত আয়াতের আলোকে বলেন, বর্তমান সময়ে আহলে কিতাবি নারীদের বিয়ে করার সুযোগ নেই। কারণ তারা যে কিতাবের অনুসারী দাবি করেন, সেটাও তারা মানেন না। আর যদি সত্যিকার অর্থেই তাদের কিতাব মানেন, তাহলে তো কোরআনও মানার কথা। কারণ তাদের কিতাবেই আল-কোরআন ও মোহাম্মাদ সা.-এর কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া প্রাথমিক যুগের মতো বিশ্বে এখন মুসলিম নারীরও অভাব নেই। 

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর